পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“অনেক দূরে “ অনেক দূরে সরে যেতে লািগল-কঁাসির ঘড়ির আখওয়াজ ক্ষীণ হয়ে ঐ •কতকগুলো বেগুনি ও রাঙা রঙের আলোর চাকা যেন একটা আর একটার পিছনে তাড়া করছে"- সারি সারি বেগুনি ও রাঙা আলোর চাকার খুব লম্বা সারি। আমার চোখের সামনে দিয়ে খেলে যাচ্ছে-তার পর আমার বাঁয়ে অনেক দূৱ পৰ্যন্ত বিস্তৃত একটা বড় নদী, ওপারেও সুন্দর গাছ, পাল, নীল আকাশ-এপারেও অনেক ঝোপ বন-কিন্তু যেন মনে হ’ল সব জিনিসটা আমি ঝাড়লন্ঠনের তোকোণা কাচ দিয়ে দেখচি-নানা রঙের গাছপালা ও নদীর জলের ঢেউয়ের নানা রঙ - ওপারটায় লোকজনে ভরা, মেয়েও আছে, পুরুষও আছে-গাছপালার মধ্যে দিয়ে একটা মন্দিরের সরু চুড়া ঠেলে আকাশে উঠেছে।---আর ফুল যে কত রঙের আর কত চমৎকার তা মুখে বলতে পারিনে, গাছের সারা গুড়ি ভ’রে যেন রঙিন ও উজ্জল থোকা থোকা ফুল-হঠাৎ সেই নদীর একপাশে জলের ওপর ভাসমান অবস্থায় জ্যাঠামশায়ের ঠাকুর-ঘরটা একটু একটু ফুটে উঠল, তার চারিদিকে নদী, কড়িকাঠের কাছে কাছে সে নদীর ধারের ডাল তার থোকা থোকা ফুলসুদ্ধ হাওয়ায় দুলছে" - ওদের ৮ সেই দেশটা যেন আমাদের ঠাকুরঘরের চারিপাশ ঘিরে • • • মধ্যে, ওপরে, নীচে, ডাইনে, বায়ে আমার মন আনন্দে ভরে গেল • কান্না আসতে চাইল।--কি জানি কোন ঠাকুরের ওপর ভক্তিতে- আমার ঘোর কাটল একটা টেচামেচির শব্দে । আমায় সবাই মিলে ঠেলিচে । সীতা আমার ডান হাত জোর ক’রে ধরে দাড়িয়ে আছে-পুরুতষ্ঠাকুর ও পুলিন রেগে আমায় কি বলচে-চেয়ে দেখি আমি ভোগের লুচির থালার অত্যন্ত কাছে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি—আমার কেঁচা লুটুচ্ছে উচু ক’রে সাজানো ফুলকো লুচির রাশির ওপরে। তারপর যা ঘটল । পুরুতঠাকুর গালে চার-পাঁচটা চড় কষিয়ে দিলেন-মেজকাকা এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। জ্যাঠাইমা এসে নরূ-পুলিনদের ওপর আগুন হয়ে বলতে লাগলেন, সবাই জানে আমি পাগল, আমার মাথার রোগ আছে, আমায় তারা কেন ঠাকুরদালানে নিয়ে গিয়েছিল আরতির সময় মেজিকাকার মারের ভয়ে অন্ধকার রাত্রে জ্যাঠামশায়দের খিড়কীপুকুরের মাদার-তলায় এক এসে দাড়ালাম । সীতা গোলমালে টের পায় নি। আমি কোথায় গিয়েছি। আমার গা কঁপিছিল ভয়ে -এ আমার কি হ’ল ? আমার এমন হয় কেন ? এ কি খুব শক্ত ব্যারাম ? ঠাকুরের ভোগ আমি তো ইচ্ছে ক’রে ছুই নি ? তবে ওরা বুঝলে না কেন ? এখন আমি কি করি ? আমি হিন্দু দেবদেবী জানতাম না, সে-শিক্ষা আজন্ম আমাদের কেউ দেয় নি। কিন্তু মিশনারী মেমব্দের কাছে জ্ঞান হওয়া পৰ্য্যন্ত যা শিখে এসেছি, সেই শিক্ষা অনুসারে অন্ধকারে মাদারগাছের গুড়ির কাছে মাটির ওপর হাঁটু গেড়ে হাতজোড় ক’রে মনে মনে বললাম-হে প্ৰভু যীশু, হে সদাপ্ৰভু, তুমি জান আমি নির্দোষ-আমি ইচ্ছে ক’রে কবি নি কিছু, তুমি 部链