পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

লতিফ্ যদি আজ আগরায় থাকিত, তাহা হইলে হয়ত সে এই বিপদ সময়ে তাহাকে একটা সৎপরামর্শ দিতে পারিত।”

 সন্ধ্যার পূর্ব্বে আনার উদ্যান ভ্রমণে বাহির হইল। অন্য দিন এই সময়ে জুমেলিকে সে সঙ্গে লয়। সে দিন সে অতি গোপনে—একাকিনীই উদ্যান মধ্যে চলিয়া গেল।

 তাহার স্বহস্ত রচিত গুলাববাগের সদ্য প্রস্ফুটিত গুলাববাসে সেই স্থান আমোদিত। আনার এই গুলাববাগের মধ্যে এক মর্ম্মরাসনে বসিয়া, নিজের অদৃষ্ট কথা চিন্তা করিতে লাগিল।

 এ চিন্তার কুল কিনারা নাই। তাহার ভবিষ্যৎ যেন বড়ই কুয়াসাচ্ছন্ন। তাহার হৃদয়ে মীর লতিফের যে একটা উজ্জ্বল ছায়া বাল্যকাল হইতে পড়িয়াছিল, যাহা তাহার হৃদয় হইতে মুছিবার কোন উপায়ই ছিল না,সে তাহাও মুছিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিয়া অনেকটা সক্ষম হইয়াছে। সুজাবেগ সম্বন্ধে সে ইতিপূর্ব্বে যে সমস্ত কুৎসার কথা শুনিয়াছিল, আর তৎসম্বন্ধে বিশ্বাসও কতকটা করিয়াছিল, সে বিশ্বাসও সে ধীরে ধীরে মুছিয়া ফেলিয়াছে। নারী জীবনের কর্ত্তব্য, পত্নীর কর্ত্তব্য পালনই, তখন তাহার শ্রেষ্ঠ ব্রত। এই ব্রত পালনের জন্য সে প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছিল।

 কত সুখের আশা, স্বপ্নের কল্পনা লইয়া, সে এই বৃহৎ পুরীর একাধিশ্বরী রাজরাণী রূপে দর্পভরে দিন কাটাইতে ছিল, কিন্তু আজ যে সে দর্প চূর্ণ হইয়াছে। নবাব সুজা খাঁর ব্যবহারে সে বুঝিয়াছে, যে তাহার স্বামীর উপর এই বিলাসিনী বাহারবানুর শক্তি তার চেয়েও বেশী।

১২৩