পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

 মীর লতিফ কক্ষ মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্রই, আনারউন্নিসা সহর্ষে বলিয়া উঠিল—“মীর লতিফ!”

 মীর লতিফও স্নেহপূর্ণ স্বরে ডাকিল—“আনারউন্নিসা!”

 বহু দিনের পর দেখা! দুই জনে চোখে চোখে মিলন। উভয়েরই হৃদয় অপূর্ব্ব আনন্দে—ধীরে স্পন্দিত। উভয়েরই বেশী কথা বলিয়া মনোভাব প্রকাশের অবসর কম।

 মীরলতিফ দেখিল— আনার উন্নিসা, ভাদ্রের ভরা দরিয়ার মত, কুলে কুলে ভরিয়া উঠিয়াছে। অঙ্গের ঢল ঢল লাবণ্য, রূপের সমুজ্জ্বল প্রভা, মুখের গম্ভীর ভাব, সলজ্জ চাহনি, যৌবনের যাহা কিছু ঐশ্বর্য্য সম্পদ, তাহা সেই দেহবল্লরীতে পূর্ণ সুষমা লইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে।

 একখানি চিকণের কাজ করা ফিরোজা—রঙ্গের ওড়নায় আনার উন্নিসার ক্ষীণ দেহযষ্টি আবরিত। সেই চিকণের কাজের উপর, দীপের আলো পড়িয়াছে। সে অপ্সর সৌন্দর্য্যের, অপূর্ব্ব মাধুরী দেখিয়া মীর লতিফ ভাবিল—যেন নীল মেঘে, বিদ্যুৎকে ঢাকিয়া রাখিয়াছে। চিরচঞ্চলা সৌদামিনী, যেন স্থির মূর্ত্তি ধারণ করিয়া তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে।

 আনার উন্নিসা বলিল— “তবু ভাল, যে আমাকে মনে পড়িয়াছে। কি অপরাধ করিয়াছি আমি লতিফ্! যে আমার উপর এতটা নিষ্ঠুর হইয়া সকল সম্পর্ক তুলিয়া দিলে?”

 এ যে এক অদ্ভূত উল্টা অভিযোগ। কে যে নিষ্ঠুর,—কে যে কাহার সহিত সম্পর্ক লোপ করিল, তাহার উত্তর দিতে সক্ষম

১৬১