পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

যে এইমাত্র আমার কক্ষ ত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়াছে, সে পিশাচি! আনারের রূপের তুলনায় এই বাহারবানু? সে যে এর বাঁদী হইবার যোগ্যা নয়! এই বাহার আমার অসংখ্য অযাচিত অনুগ্রহের পরিবর্ত্তে, কেবল জ্বালাই আনিয়া দিয়াছে। আমি কি এই শান্তিময়ী আনারকে পত্নীরূপে লাভ করিয়া আবার বেহেস্তের আলোকময় পথে ধীরে অগ্রসর হইতে পারিব না? আনারের পিতা, এক মাস সময় চাহিয়াছেন। কিন্তু দুই মাস ত উত্তীর্ণ হইয়া গেল। আমি এই দেবতার ভোগ্য, রত্নকে লাভ করিবার জন্য একান্ত চেষ্টা করিয়াছি কই? কালই আমি আনার উন্নিসার পিতাকে এই বিষয়ে এক পত্র লিখিব। এই ছলনাময়ী বাহারবাণুর সাহচর্য্য, দিনে দিনে আমার পক্ষে বড়ই বিরক্তিকর হইয়া উঠিতেছে।

 মুক্তবায়ুতে কিছুক্ষণ বসিয়া থাকার জন্য সেরাজির নেশাটা ক্রমশঃ জমাটভাব ধারণ করিতেছিল। নবাব হুজা বেগ অগত্যা চিন্তাসূত্রজাল ছিন্ন করিয়া শয্যা আশ্রয় করিলেন।

 কিন্তু নিদ্রাতেও তাঁহার নিস্তার নাই। তিনি স্বপ্নে দেখিলেন এই দেবীদুর্ল্লভ রূপসমন্বিতা আনার উন্নিসা, যেন তাঁহার শয্যা পার্শ্বে বসিয়া সম্মিত বদনে বলিতেছে—“ভয় কি তোমার নবাব সুজা বেগ! এই দেখ আমি তোমার বাঁদী হইতে আসিয়াছি। তোমার ষোল আনা প্রাণ, আর যত্ন মায়া মমতা আমায় দাও, আমি তার পরিবর্ত্তে তোমায় বেহেস্তের পবিত্র শান্তি আনিয়া দিব। যে পথে তুমি এখন চলিতেছ—তাহা তো জাহান্নমের পথ!

৩৯