পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

ছলনাময়ী নারীর কৌশল জালে পড়িয়া, নবাব সুজাবেগ এতটা আত্মহারা হইয়া পড়েন যে, জননীর পুনঃ পুনঃ নির্ব্বন্ধ স্বত্বেও তিনি বিবাহ-বন্ধনে কোন রূপেই আবদ্ধ হইতে চাহিলেন না। এই জন্যই তাহার মাতা, এই সুন্দরী-শ্রেষ্ঠা আনার উন্নিসার সহিত তাঁহার পুত্রের বিবাহ ঘটাইতে অতটা ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িয়া ছিলেন। এই চেষ্টা কতদূর অগ্রসর হইয়াছিল, তাহাও পাঠক দেখিয়াছেন। কিন্তু সহসা তাঁহার মৃত্যু ঘটায়, এই বিবাহ ব্যাপার সম্বন্ধে অনেক গোলযোগ বাধিয়া যায়।

 কাণাবূষার সুজাবেগ একদিন শুনিলেন যে, আমীরউদ্দৌলা নামক একজন হীন প্রকৃতির নগণ্য লোক বাহারবানুর বড়ই অন্তরঙ্গ হইয়াছে। তাহার এতটা সাহস বৃদ্ধি হইয়াছে, যে গুপ্তভাবে সে তাহার বাটীতেও যাতায়াত করে।

 এই আমার-উদ্দৌলার কথা তুলিয়া, তিনি মধ্যে মধ্যে বাহারবানুকে রহস্য করিতেন। পাকে প্রকারে, নানা রকমে জেরা করিয়া তাহার মনোভাব জানিবার চেষ্টা করিতেন। কিন্তু চতুরা বাহারবানু নবাবের এ সন্দেহটা যে অলীক ও কল্পিত, এইটীই নানা কৌশলে প্রমাণ করিয়া দিত। তাহার মধুর অপাঙ্গে বিদ্যুতের মত উজ্জ্বল কটাক্ষ ছিল, ভাষায় ভালবাসার ছলনা ছিল— ভুবনমোহন রূপ ছিল, ওষ্ঠাধরে মধুর হাসি ছিল, আর তার অম্বুজলাঞ্ছিত নেত্রে অতি সামান্য চেষ্টাতেই অশ্রুধারা বাহির হইত। এ সম্বন্ধে কাজেই তাহাকে বেশী কষ্ট পাইতে হইত না। এমন কি অনেকবার সুজাবেগ

৪৪