পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

সদয় ব্যবহার করিয়া আসিয়াছি, তাহা আর করিব না। আমাদের পাওনা টাকা আপনার ভিটা বেচিয়াও আদায় করিতে বাধ্য হইব।”

 এই পত্র পাইয়াই জামাল খাঁ খুবই বিচলিত হইয়া পড়েন। এই ঐশ্বর্যশালী নবাব সুজা বেগ যে কতটা হীন প্রকৃতির লোক, তাহাও তিনি বুঝিলেন।

 সুজা খাঁর নষ্ট চরিত্র সম্বন্ধীয় কথাগুলি যে জামাল খাঁর একেবারে অপরিজ্ঞাত ছিল, তাহা নয়। লোকের সহিত সুজা খাঁর বাহিরের ব্যবহারটা খুব লেফাকা দুরস্ত। তিনি মিষ্টভাষী, সদালাপী, আর তাঁর চেয়ে যাঁরা একটু অবস্থাহীন, তাঁহাদের প্রতি এমন একট। অমায়িকতার ভাব তিনি দেখাইতেন—যেন ঐশ্বর্য্যজনিত কোন দম্ভ বা অভিমান তাঁহার নাই।

 জামাল খাঁর একমাত্র কন্যা এই আনার উন্নিসা। এই আনার উন্নিসাকে তিনি এক দুষ্কৃতাচারীর হস্তে সমর্পণ করিতে নিতান্তই নারাজ। সুজা খাঁর রূঢ় পত্রখানি পাইবার পূর্ব্ব পর্য্যন্ত, অন্ততঃ তাঁহার মনের এরূপ একটা দৃঢ়তা ছিল। পরলোকগত পত্নীর অন্তিম বাসনা পূর্ণ করিতে, তিনি খুবই উৎসুক ছিলেন।

 কিন্তু এই পত্রখানি পাওয়ার পর হইতে তাহার মন ভাঙ্গিয়া গেল। তাঁহার দৃঢ় সংকল্প ভাসিয়া গেল। পত্নীর নিকট তাঁহার মৃত্যুশয্যা পার্শ্বের সেই পবিত্র প্রতিশ্রুতি, মীরলতিফের কুতোপ কাজের কৃতজ্ঞতা, সবই তিনি ভুলিয়া গেলেন। প্রচণ্ড স্রোততরঙ্গ মধ্যে সহসা নিমজ্জিত ব্যক্তি আত্মরক্ষার জন্য, যেমন তৃণখণ্ডকেও

৭৬