পাতা:দেওয়ানা - হরিসাধন মুখোপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেওয়ানা

আশ্রয় মনে করিয়া বাঁচিতে চেষ্টা করে, জামাল খাঁ, তাঁহার ইজ্জত রক্ষার জন্য, সেইরূপ আনারকে সুজাখাঁর হস্তে সমর্পণ করিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হইলেন।

 অন্তরমধস্থ এক গুপ্তবাণী যেন তাঁহাকে বলিয়া দিল—“তোমার কন্যার ভাগ্যে যাহা আছে, তাহা লঙ্ঘন করাইবার তুমি কে? তাহার পরিবর্ত্তনের শক্তি তোমার কই? বিধাতা যার সঙ্গে যার মিলনের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন—সে ব্যবস্থার রদ করিতে পার, এমন ক্ষমতাই বা কই তোমার? কত লোকে চেষ্টা চরিত্র করিয়া বড়লোকের বাটীতে কন্যার বিবাহ দিবার জন্য, কতই না প্রয়াস পায়। বিনা চেষ্টায় যদি এই প্রয়াসফল তোমার হস্তগত হয়, মুর্খের মত তাহা ছাড়িয়া দিতেছ কেন? নবাব সুজাখাঁর মত শক্তিশালী লোকের সহিত শত্রুতা ঘটিলে তোমার মান ইজ্জত সবই নষ্ট হইবে। সত্য বটে, সুজাখাঁর চরিত্র নিষ্কলঙ্ক নহে। কিন্তু পতিপরায়ণা সাধ্বী রমণীর শক্তি যে কত বেশী, তাহা ত তুমি ভাব নাই? হয়তঃ তুমিই একদিন দেখিবে,এই দুশ্চরিত্র নবাব—তোমার কন্যার একান্ত যত্নে চেষ্টায় ও শক্তিতে দেবচরিত্র হইয়া উঠিয়াছে।”

 অন্তর্বাণীর এই সব কথায়, জামালখাঁর প্রাণের বোঝাটা খুবই কমিয়া গেল। একটু আগেই তিনি ভাবিতেছিলেন, কন্যার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি তাহাকে অপাত্রে সমর্পণ করিয়া বড়ই একটা অন্যায় কাজ করিতেছেন। কিন্তু এই ভাবের চিত্তায় বিবেকের সে তীক্ষ্ণ দংশন জ্বালাটা যেন খুবই কমিয়া গেল।

৭৭