পাতা:দেশবন্ধু রচনাসমগ্র.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেশের কথা ১৯ বাজনা বাজিতে লাগিল। বাগালী আপনাকে চিনিতে ও বুঝিতে আরম্ভ করিগ। রবীন্দ্রনাথ গাহিলেন “বাংলার মাটি বাংলার জল সত্য কর সত্য কর হে ভগবানু।” ‘বাঙ্গঙ্গার জল বাঙ্গলার মাটি আপনাকে সার্থক করিতে লাগিল। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেক জ্ঞানী গুণী মহাপণ্ডিত আছেন, যাহার নাকি বলেন যে, এই স্বদেশী আন্দোলন ইহা একটা বৃৎ জাস্তির ব্যাপার। আমরা নাকি সব দিকে ঠিক হিসাব করিয়া চলিতে পারি নাই। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে আযাদের দেশে একটা প্রাণহীন জ্ঞানের 'মাবির্ভাব হইয়াছে। এই মুখস্ত করা জ্ঞানের ক্ষমত। অল্পই; কিন্তু অহঙ্কার অনেকখানি। এই স্কুনে যাহরা জ্ঞানী, তাগার সব জিনিস সের দাড়ি লইয়া যাপিতে বসেন। ঐাহারা। অঙ্কশাস্ত্রের শাস্ত্রী, সব জিনিস লইয়া আঁক কষিতে বসেন। কিন্তু প্রাণের যে বা, সে ত অঙ্ক-শাস্ত্ৰ মানে না, সে যে সকল মাপকাটী ভাসাইপ্পা লইয়া যায়। স্বদেশী আনোগন একটা ঝড়ের মত বহিয়া গিয়াছিল, একটা প্রবল বন্যায় আমাদের ভাসাইয়া লইয়া গিয়াছিল। প্রাণ যখন জাগে, তখন ত হিসাব করিয়া জাগে না। মাহুষ যখন জন্মায়, সে ত হিসাব করিয়া জন্মায় না বা জগাইতে পারে না বলিয়াই সে জন্মায়। আর না জাগিয়া থাকিতে পারে। না বলিয়াই প্ৰাণ একদিন অকস্মাৎ জাগিয়া৷ উঠে। এই ঘে মহাবড়ার কথা। বলিলাম, তাহাতে আাষরা ভাসিয়া-ডুবিয়া, বাচিয়া ছি। বাঙ্গলার যে জীবন্ত প্ৰাণ, তাহার সাক্ষাৎ পাইয়াছি। বাঙ্গলার প্রাণে প্ৰাণে আবহমান যে সভ্যতা ও সাধনার স্রোততাহ'তে অবগাহন করিয়াছি{ বাঙ্গলার যে ইতিহাসের •ধার, তাহাকে কতকটা বুদ্ধিতে পারিয়াছি। বৌদ্ধের বুদ্ধ, শৈবের শিব, শাক্তের শক্তি, বৈষ্ণবের ভক্তি, সবই যেন চক্ষের সম্মুখে প্রতিভাত হইল। চণ্ডিদাস, বিদ্যাপতির গান মনে পড়িল। মহাপ্রভুর জীবন-গৌরব আমাদের প্রাণের গৌরব বাড়াইয়া দিল। জ্ঞানদাসের গান, গোবিনদাসের গান, লোচন। দাদের গান, সবই যেন একসঙ্গে সাড়া দিয়া উঠিল। কবিওয়ালাদের গানের ধনি প্রাণের মধ্যে বাজিতে লাগিল। রামপ্রসাদের সাধনসঙ্গীতে আমরা মজিলাম। বুঝিলাম, কেমন ইংরাজ এ দেশে আসিল, বুঝিলাম রামমোহনের তপস্তার নিগুঢ় মৰ্ম্ম কি? বঙ্কিমের যে ধ্যানের মূৰ্ত্তি সেই “তুমি বিষ্ঠা তুমি ধর্ম তুমি হৃদি তুষি মৰ্ম্ম।