পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বরং বলতে-বেরাহ্মণ দেবতা, ওনাদের পা ধোয় জল খেলি স্বগৃগো । ওনাদের একটু সেবা করবো তার আবার পয়সা ! কিন্তু শুধু ব্ৰাহ্মণের নয়, আমি যে-কোনো জাতির সেবা করতে দেখেচি ওকে আমানবদনে। জেলে-পাড়ার অথর্ব বুড়ী বিন্দের মাকে তার সঞ্চিত তেঁতুলকাঠের গুড়ি কুড়ুল দিয়ে চ্যােলা করে দিতে দেখেচি। কত ক্রিয়াহীন মধ্যাহ্নে ব্ৰাহ্মণপাড়ার চণ্ডীমণ্ডপগুলি যখন অলস যুবক ও প্রৌঢ়দের পাশা দাবা ক্রীড়ার বিবিধ ধ্বনিতে অথবা দিবানিদ্রাভিভূত ব্যক্তিদের নাসিকাগর্জনে মুখরিত, তখন গণেশদাদা কারো তেঁতুলগাছে তেঁতুল পেড়ে দিচ্চে, না হয়। কারো কলাইয়ের গাছ-বোঝাই গাড়ি চালিয়ে খামারে আনাচে। ঘামে ওর সারা দেহ ভিজে, মাথার চুল ধূলিধূসর, পেটে পেট লেগেচে, কারণএখনও খাওয়া হয়নি । কখনো দেখিনি গণেশদাদা কারও সঙ্গে ঝগড়া করচে কিংবা চড়াসুরে কথা বলচে । আমার বাল্যকাল কেটে গেল। কলেজে পড়ে দুটো পাস করে গ্রামে ফিরে যেতে পথেই গণেশদাদার সঙ্গে দেখা বেলতলার মাঠে । গণেশদাদা গরু চরাচ্চে মাঠের মধ্যে একটা গাছতলায় দাড়িয়ে। পাশ দিয়েই আমার পথ। গণেশদাদাকে ডেকে বললাম-ও গণেশদাদা, চিনতে পারো ? --তা চিনতে পারবো না, দ্যাখোদিনি দাঠাকুর। কোলে পিঠি করে মানুষ করলাম। আর চিনতি পারবো না ? কত বচ্ছর দেখিনি । কোথায় ছিলে এ্যাদিন আমাদের ভুলে ? --মামার বাড়ি। তুমি তো বুড়ো হয়ে গিয়েচ দেখচি। মাথার চুল পেকেচে হ্যা গণেশদাদা ? -ওম, তোমাদের কোলে করে মানুষ করলাম, তোমরাই কত বড় হয়ে গেলে-মুই আর বুড়ো হবে না ? বয়েস কি কম হোল ? δο,