নীলগঞ্জের ফালমন্ সাহেব
সাহেবের নাম এন. এ. ফারমুর। নীলগঞ্জের নীল কুঠীয়াল সাহেবদের বর্তমান বংশধর। আমি বাল্যকাল হইতেই সাহেবকে চিনি। যখন স্কুলে পড়ি, সাহেবদের কুঠীতে একবার বেড়াইতে যাই। ফারমুর সাহেবকে এদেশের লোক ফালমন্ সাহেব বলিয়া ডাকে। আমার বাল্যকালে ফালমন্ সাহেবের বয়স ছিল কত? পঞ্চাশ হইবে মনে হয়। সাহেবদের কুঠীতে যাইয়া দেখিতাম সাহেব দুধ দোয়াইতেছেন। অনেকগুলি বড় বড় গাই ছিল কুঠীতে, বিশ ত্রিশ সের দুধ হইত। নৌকা করিয়া প্রতিদিন ওই দুধ মহকুমার সহরে প্রেরিত হইত। আমাকে বড় ভাল বাসিতেন। আমাকে দেখিয়া বলিতেন—সকাল-বেলাতেই এসে জুটলে? খাবা কিছু?
—খাবো।
—কি খাবা? দুধ?
—যা দেবেন।
—ও মতি, ছেলেটিকে গুড় দিয়ে মুড়ি দাও আর দু’ উড়কি দুধ দাও।—আমি এই মাত্তর খেয়ে আলাম—বোসো খোকা, বোসো।
নীলকুঠীর আমলে ফালমন সাহেবের বাবা লালমন্ (লালমুর) সাহেবের অসীম প্রতিপত্তি ছিল এদেশে। নীল চাষ উঠিয়া যাইবার পরে বিস্তৃত জমিদারীর মালিক হইয়া এ দেশেই তিনি বসবাস করিতে থাকেন। ক্রমে জমিদারীও চলিয়া যায় অনেক, লালমন্ সাহেবও মারা যান। ফালমন্ বিস্তৃত আউশ ও আমন ধানের জমি চাষ করিতে থাকেন, বড় বড় গরু পুষিতেন, সেই সঙ্গে হাঁস, মুরগী, ছাগল ও ভেড়া। সাহেবের কুঠীতে সারি সারি ধানের গোলা ছিল বিশ-
১১