—তুমি মাখনলাল মাষ্টারের ছেলে? চেতলমারির ইস্কুলির?
—আজ্ঞে হ্যাঁ।
—তাই বলো। মাখন মাষ্টার তো আমাদের বন্ধু লোক। বেশ, বসো, দুধ দিয়ে মুড়ির ফলার ক’রে খাও।
ফালমন্ সাহেবের সঙ্গে এই ভাবেই আলাপ শুরু। তা’ বাদে মাঝে মাঝে সাহেবকে চিতলমারির খড়ের মাঠে আমীনকে সঙ্গে লইয়া জমি মাপিতে দেখিয়াছি। কতদিন নৌকায় লোকের সাহায্যে পটল কুমড়ো বোঝাই করিতে দেখিয়াছি। লম্বা একহারা সাহেবী চেহারা। ভুঁড়ি একদম নাই, গায়ে এক আউন্স চর্বি নাই কোথাও। গোঁফ জোড়াটা বড্ড লম্বা, দৃঢ় চোয়াল সবই ঠিক সাহেবী ধরনের। কিন্তু পোষাকটা সব সময় সাহেবের মত নয়, কখনো ধুতি, কখনো কোটপ্যাণ্টের উপর মাথায় তালপাতার টোকা। শেষোক্ত বেশটা দেখা যাইত যখন ফালমন্ মাঠের চাষবাসের তদারক করিতেন। কৃষাণ ছিল সংখ্যায় ত্রিশ পঁয়ত্রিশ, লাঙ্গল গরু চল্লিশখানা, আট দশখানা গরুর গাড়ি। অত বড় ফলাও চাষ সাধারণ কোনো বাঙালী গৃহস্থ চাষী কল্পনাও করিতে পারে না। তালপাতার টোকা মাথায় কৃষকদের কাজকর্ম দেখাশোনা করিতেন বটে, কিন্তু হুঁকোয় তামাক খাইতে কখনো দেখি নাই—পাইপ সর্বদা মুখে লাগিয়াই থাকিত। কৃষাণদের বলিতেন—বাবলাতলার জমিগুলোন্তে দোয়ার (অর্থাৎ দ্বিতীয়বার চাষ) দেবা কবে ও সোনাই মণ্ডল? তা দ্যাও। আর দেরি করবা না। রস টেনে গেলি ঘাস বেধে যাবে আনে। তখন লাঙ্গল বেশী লাগবে। এখনো ভুঁইতে রস আছে। সোনাই মণ্ডল হয়তো বলিল—বাবলাতলার ভুঁইতে পানি আর কনে, সায়েব? কে বল্লো আপনারে?
—নেই? কাল সাঁজের বেলা আমি আর প্যাট্ (সাহেবের শালা, এখানেই বরাবর থাকিত দেখিতাম, চাষবাসের কাজ দেখে) যাইনি বুঝি? ঝা পানি আছে তাতে কাজ চলে যাবে আনে।
—ছোলা কাটতি হবে এবার।
১৩