ঝোপের দিকে এগিয়ে গিয়ে ভাল করে চেয়ে দেখি একটা কালোমত বুড়ো লোক ময়লা নেকড়া-চোকড়া জড়িয়ে বসে আছে একটা কুঁচঝোপের নিচে। ভয়ের সুরে লোকটা টি টি করে বললে—মোরে খাতি দাও। না খেয়ে মরে গেলাম।
—এখানে কি করে এলে? বাড়ি কোথায়?
—মোরে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েল গোপালনগর ইষ্টিশানে। হাঁটতি হাঁটতি এইটুকু এয়েলাম। না খেয়ে মলাম। এট্টু জল দ্যাও। বাঁচবো না—মোরে বাঁচাও—তুমি মোর ধম্মের বাপ—
—গাড়ি থেকে নামিয়ে দিলে কেন? টিকিট করোনি?
গায়ে মায়ের দয়া হয়েচে! হাঁটতি পারিনে। সারা অঙ্গে ব্যথা। মোরে বাঁচাও—
অন্ধকারে ভালো দেখতে পাইনে। তাইতো, ওর সারা গায়ে বসন্ত বেরিয়েচে! নড়বার চড়বার ক্ষমতা নেই। আর এই শীতে, এই নির্জন রেল রাস্তার ঝোপের মধ্যে আমার সারা গা শিউরে উঠলো। কিন্তু কি উপায় করি আমি একা?
—বিস্কুট খাবা?
আমার থলেতে বিস্কুট আছে। তখন আলি নিকিরিকে মিথ্যে কথা বলেছি। রোজ রোজ বিনি পয়সায় পরকে বিস্কুট খাওয়াতে গেলে চলে না। ও কি কখনো বিনি পয়সায় মাছ খাওয়ায় আমাকে? থলেতে খান কুড়ি বিস্কুট ছিল, থলে ঝেড়ে ওর নেকড়াতে ফেলে দিলাম দূর থেকে। একটা বিড়ি ও একটা দেশালাইয়ের খোলে দুটি মাত্র কাঠি পুরে ওর নেকড়াতে ছুঁড়ে দিয়ে বললাম—বিড়ি খাও—
বিড়ি ধরাবার সময় দেশালাইয়ের কাঠি ও অতি কষ্টে জ্বাললে। ওর হাত কাঁপচে। দেশালাইয়ের কাঠির আগুনে দেখলাম ওর মুখখানা কী বীভৎস দেখাচ্চে বসন্তের ঘায়ে! বলতে নেই, মা শীতলা, রক্ষে করুন।
—এট্টু জল দ্যাও মোরে—জল তেষ্টায় মলাম—
৩৯