রসিকের দিদি বড় ভালো লোক। আমার তো বৃন্দাবনে গিয়ে কি রকম হোল, দু’চারদিন মন্দির আর ঠাকুর দেখে দেখে বেড়াই। একদিন একেবারে অজ্ঞান।
—অজ্ঞান?
—বাবাঠাকুর, একেবারে ভাবের ঘোরে অজ্ঞান!
—বল কি? ভাব সমাধি?
—যাই বলেন বাবাঠাকুর। দশ বারো দিন একেবারে দিনরাত জ্ঞান ছিল না আমার। নাওয়া-খাওয়া করতে পারতাম না। না খেয়ে মরতে হোত যদি রসিকের দিদি না থাকতো। কি সেবাটাই করেছিল পনেরো কুড়ি দিন।
—এই যে বললে দশ বারো দিন?
—দশ বারো দিন তো একেবারে অজ্ঞান। তারপর জ্ঞান হোল বটে, কিন্তু ঘোর কাটে না। উঠতে পারিনে, হাঁটতে পারিনে।
—ফিটের ব্যামো ছিল না তো আগে?
—না বাবাঠাকুর, শুনুন বলি আশ্চর্যি কাণ্ড। সেই অবস্থায় একদিন রসিকের দিদি সন্দেবেলা সঙ্গে করে কাছে এক ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে গিয়েছে। ফিরে আসচি, পায়ে কিসের একটা ঠোক্কর লেগে হোচট্ খেলাম। একখানা ছোট্ট পাথর, মাটিতে আদ্ধেক পোঁতা। মাটি একটুখানি খুঁড়ে হাতে তুলে দেখি, বাবা, পাথরের গোপাল মূর্তি। বাবা, বলবো কি আমার সারা গা যেন শিউরে উঠলো। মনে মনে ভাবলাম আমি তো মহাপাপী, আমার ওপর তাঁর এ অহৈতুক কির্পা কেন? আমি তো কিছু করিনি তাঁর জন্যি?
গিরিবালার চোখ ছলছল করে এল। নাঃ, ফটিক কাকা যাই বলুন, এর সত্যই অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ‘পরম মোহান্তী’ হওয়ার পথে উঠেচে দেখচি গিরিবালা। হরিদাস ঠাকুর আর লক্ষহীরার উপাখ্যান চোখের সামনে পুনরায় অভিনীত হতে চলেচে নাকি?
ফটিক কাকার কথা আর শুনচিনে।
৫১