—না বাবা, ও আউশ চালের মোটা ভাত আপনাদের খেতে দেব কি বলে? ও ওরা খাবে গিয়ে।
—এত চাল ডাল পেলে কোথায়? খুব খরচ হয় তোমার দেখচি।
—কিছু না বাবা। ওরাই সব আনে। নিজেরাই রাঁধে, আমোদ করে খেয়ে যায়। ওরা বড্ড ভালবাসে আমাকে। সবই গোপালের ইচ্ছা।
ওর সে বিগ্রহ আমি দেখলাম। খুব ফুল দিয়ে সাজিয়েচে। ছোট্ট একটি পাথরের পুতুলের মত। সে ঘরে সবারই অবারিত দ্বার। চাষীরা পাকা কলা, বাতাবি লেবু, শশা প্রভৃতি ফল নিয়ে এসেচে, গোপালের বেদীর আশেপাশে সেগুলো জমা আছে। সন্ধ্যার সময় ধূপধূনো দেওয়া হয়েচে। ছোট্ট একটা মাটির প্রদীপ মিট মিট করে জ্বলচে ঘরে।
গিরিবালা আমায় বাতাবি লেবুর কোয়া ছাড়িয়ে, শশা কেটে কলার পাতায় সাজিয়ে নিয়ে এসে দিলে। মিষ্টির মধ্যে আখের গুড়। গোটা কতক ছোলাভিজে ওই সঙ্গে ওর আশ্রমের আবেষ্টনীতে বসে সেই পূর্ণিমার প্রথম প্রহর রাত্রে বেশ লাগল খেতে।
গিরিবালার মুখে কিছু ভালো কথা শুনবার জন্যে ওরা এসেচে। গিরিবালা বোধহয় প্রতি পূর্ণিমাতেই ওদের কিছু কিছু ভাল কথা শোনায়। যারা এসেচে, তারা দেখি কেবলই বলতে লাগলো, মা, আজ দু’কথা বলবেন না? সন্দে উতরে গিয়েছে, এবার বলুন মা—
গিরিবালা সঙ্কুচিত হতে লাগলো আমার সামনে।
—বাবাঠাকুর বরং কিছু বলুন ওদের। আপনি থাকতি আমি আবার কি শোনাবো?
—সে কি কথা? আমি তো ধর্মকথার আচার্যি নিজেকে বলিনি কোনোদিন। রাজনীতির কথা শুনতে চাও শোনাতে পারি। উড়ো জাহাজ কি করে হোল তার কথা বলতে পারি। কিন্তু তত্ত্ব কথা! বাপরে।
৫৪