বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মড়িঘাটের মেলা

 আমাদের গ্রাম্য নদীর ধারে মড়িঘাটা বলে ছোট্ট একটা গ্রাম। ক’ঘর বুনোর বাস। এ জেলায় যখন নীলকুঠীর আমল ছিল, দোর্দণ্ডপ্রতাপ নীলকুঠীর সাহেবেরা টম্‌টম্ হাঁকিয়ে চলে যেত নদীর পাশের চওড়া ছায়াচ্ছন্ন পথ বেয়ে, তখন শ্রমিকের কাজ করবার জন্যে সাঁওতাল পরগণা থেকে যে সব লোক আমদানী করা হয়েছিল, তাদেরি বর্তমান বংশধরগণ এখন একেবারে ভাষায়, ধর্মে, আচারে ব্যবহারে সম্পূর্ণ বাঙালী হয়ে পড়েছে—এদেশে তাদের বলে ‘বুনো’। সমাজের নিম্নস্তরের শেষ ধাপে এদের স্থান। লোকের কাঠ কেটে, ধান মেড়ে দিনমজুরি করে এরা জীবিকা নির্বাহ করে। সারাদিন খাটুনির পরে তাড়ি খায়। এই তাড়ি খাওয়ার জন্যেই এরা ঘৃণিত হয় পল্লীসমাজে। পল্লীগ্রামে হিন্দু বা মুসলমান চাষীমহলে মদ কেউ ছোঁয় না। ওটা ভদ্রলোকদের একচেটে ব্যাপার।

 মড়িঘাটা নদীপথে চার ক্রোশ আমাদের ঘাট থেকে।

 সেবার মাঘীপূর্ণিমার দিন গঙ্গাস্নানের যাত্রীরা যাচ্ছে কেউ নবদ্বীপে, কেউ গৌরনগরের ঘাটে। উভয় স্থানই বহু দূর আমাদের গ্রাম থেকে। যাদের নিজেদের গরুর গাড়ি আছে, তারা আগের রাত্রে গাড়ি চড়ে চলে গিয়েছে আঠারো উনিশ মাইল দূরবর্তী গৌরনগরের গঙ্গাতীরের দিকে। অপেক্ষাকৃত সাহসী ও চালাক চতুর যাত্রীরা যাবে ট্রেনে উঠে নবদ্বীপ।

 রাধা দুধ দিতে এসে বললে—বাবু, গঙ্গাচানে গ্যালেন না?

 —যে ভিড়! মেয়েদের নিয়ে অতদূর যাওয়া—

 —তবে মড়িঘাটা যান বাবু নৌকা করে। কত লোক যাচ্ছে।

 —সেখানে গঙ্গা কোথায়? মড়িঘাটায় গিয়ে কি হবে?

৬৪