বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ইতিমধ্যে সাধু বাবাজি একটা বড় আড়াইসেরা পালি ভর্তি মুড়কি এবং একছড়া সুপক্ক মর্তমান কলা নিয়ে এসে বললে—বাবু, সেবা করুন—

 —এ সব আবার কেন?

 —কেন বাবু, আমরা এতই অধম জাত যে আমাদের কোনো জিনিস নেবেন না?

 —নিচ্চি তো! জল নিচ্চি, কাঠ নিচ্চি, বাসন-কোসন নিচ্চি—তা হোলে কি নিলাম না বলুন! খাবারদাবার কেন আবার—

 —তা হোক্‌। আমার আখড়ায় আপনাদের মত লোক কখনো আসেনি। আমি জেতে বুনো। ভেক নিয়ে বোষ্টম হইচি। তেনার দয়া। কি বুঝি বলুন? আমার নাম ছিল রামনাল বুনো। আমার বাপের নাম ছিহরি বুনো। তিনি তবলদার ছিলেন। ভদ্দর নোকের বাড়ি কাঠ কেটে সংসার নির্বাহ করতেন। তেনার বয়েস হয়েছিল অনেক, এক কম একশো বছরে মারা যান। আমার বয়েস কত বলুন দিকি বাবু?

 সাধুর চেহারা বেশ ভালো লেগেছিল আমার। খুব মোটা, জোয়ান, লম্বা চেহারা। প্রকাণ্ড ভুঁড়ি—অথচ অথর্ব গোছের মোটা নয়, বেশ বলিষ্ঠ, কর্মকুশল হাত পা। লম্বা ধরনের খুব বড় মুখখানা, মস্ত বড় বড় জ্বলজ্বলে চোখ দুটো, নারদ ঋষির মত এতখানি সাদা দাড়ি। মাথায় লম্বা চুল পেছন দিকে মেয়েদের মত ঝুঁটি করে বাঁধা, অথচ মুখখানিতে বালকের সারল্য ও হাসি। যাত্রাদলের মহাদেবের মত দেখতে।

 বললাম—কত হবে, ষাট বাষট্টি?

 সাধু হেসে বললে—বিশ্বাস করবেন না। ঊনআশি বছর যাচ্ছে—তেনার দয়া—

 সত্যিই আশ্চর্য হবার কথা। এমন মর্দ জোয়ান পুরুষটিকে আশি বছরের বুড়ো কোনো ক্রমেই ভাবা যায় না। মুখের চামড়া মসৃণ,

৭০