বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওর হাতে দিয়ে দেবে। তারপর সে যা হয় করুক গে। এখন তুমি আমি ভগবানের কাছে দায়ী আছি নাবালকের টাকার জন্য। নাবালকের স্বার্থরক্ষার দায়িত্ব আমার এবং তোমার।

 সতীশ হাতজোড় করে বললে—দেখুন দিকি, এই জন্যই তো বলি ব্রাহ্মণ দেবতা। সাধে কি আর বলি। তা আপনি আমাকে ডাকলেন কেন? আমাকে কেন জড়ান? আপনার কাছেই তো—

 —না। বলাই যদি এ গাঁয়ে বাস করতো, তবে টাকা আমিই রাখতাম। ওরা আমার প্রজা, ভিটের খাজনা নিইনে, তবে ব্যাগার দিতে হয় আমার বাড়ির ক্রিয়াকর্মে। প্রজা হয়ে থাকতো, ওর স্বার্থ দেখতাম। এখন যখন চলে যাচ্ছে, সে দায়িত্ব আমি রাখি কেন? সেই জন্যে ওকে বলেছিলাম, তোমার গাঁয়ের মাতব্বর লোক একজনকে ডেকে এনো। কেন, কি বৃত্তান্ত তা আর বলিনি। টাকা অতি খারাপ জিনিস সতীশ, তুমিও তো বিষয়ী লোক, আমার কথা তুমি বুঝতে পারবে। টাকাটা আমি এনে দিই, তুমি নিয়ে যাও—

 —আচ্ছা দেবতা, একটা কথা। আপনার যখন হুকুম, তখন নিয়ে আমি যাবো। তবে মোড়ল মাতব্বর আমি কিছুই নই। আপনাদের ছিচরণের চাকর—এই মাত্তর কথা। মোড়ল মাতব্বর আমি নই। কিন্তু একটা কথা—

 —কি?

 —যদি বলাই সাবালক হওয়ার আগে মারা যায়, তবে টাকার কি হবে?

 —তাহলে মা ও ছেলের নামে এই দিয়ে স্বজাতি জ্ঞাতিকুটুম ভোজন করিও একদিন। ওদের তৃপ্তি হবে।

 —আহা, ওর মা হাজারি বড্ড ভালো লোক ছিল। তার কথা ভাবলে কষ্ট হয়। বড্ড সরল।

 সতীশ সেদিন টাকাকড়ি গুনে-গেঁথে নিয়ে চলে গেল বটে, কিন্তু মাসকয়েক পরেই একদিন এসে হাজির হোল। সেই চণ্ডীমণ্ডপে

৮৫