বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোলে উঠে আরও কাঁদতে লাগলো। আমি কত বোঝালাম, কত ছড়া বললাম, গান গাইলাম, কিছুতেই শুনলে না, কান্নাও থামলো না। ওর মা এমন রেগে গেলেন আমার ওপর, আমার কাছ থেকে খুকিকে নিয়ে নিজে কোলে করে বসলেন। আমায় কিছু খেতে দিলেন না। রাত্রেও আমাকে ভাত দিতেন না বোধ হয়। রাত্রে চক্কত্তি মশায় খেতে বসে বললেন—বিনোদ খেয়েছে?

 তখন কত রাত হয়ে গিয়েছে! খিদেয় অবসন্ন হয়ে পড়েছি। স্কুল থেকে এসে পর্যন্ত একগাল মুড়িও খাইনি।

 অন্য দিন এমন সময় কোন্ কালে আমার খাওয়া হয়ে যায়! পুরুত মশায় নবীন দাঁর চণ্ডীমণ্ডপের দাবা খেলার আসর থেকে রোজই বেশি রাত করে ফেরেন। তারপর তিনি খেতে বসেন।

 খুকির মা বললেন—না।

 পুরুত মশায় বললেন—কেন? এত রাত্রেও খায়নি এখনো? জ্বর হয়েছে বুঝি?

 —না, জ্বর হবে কেন? বসে পড়ছিল, তাই ভাত দিইনি এখনো।

 —যাও, ডেকে দাও। ছেলেমানুষ, খিদে পেয়েচে, আমার পাশেই বসুক।

 —তুমি খেয়ে উঠে যাও, দেবো এখন।

 —না, ওকে ডাকো। জায়গা করে দাও এপাশে।

 পুরুত ঠাকুরের কথায় আমার জায়গা করে দিলেন খুকির মা। নয়তো আমি জানতাম রাত্রে তিনি আমায় না খাইয়ে রেখে দিতেন। কাউকে কিছু বলা আমার স্বভাব নয়। চুপ করেই থাকতাম।

 সেই বাড়িতেই ফিরে যাওয়ার কথা বলচে গোপাল!

 সেখানে আমার মা নেই। মা থাকলে—আমায় দেখলে রাস্তা থেকে ছুটে আসতেন। এখানে খুকির মা আমার জ্বর দেখলেই মুখ ভার করে বলবে—ঐ এলেন অসুখ নিয়ে! কে এখন সেবা করে?

৯০