পাতা:নেতাজীর জীবনী ও বাণী - নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুভাষচন্দ্রের জীবনী ও বাণী

প্রবল হইয়া উঠে। হিমালয়ে ও তীর্থস্থানে অনেক সাধু সন্ন্যাসী বাস করেন ইহা তিনি জানিতেন। উপযুক্ত গুরুর উপদেশ ব্যতীত মোক্ষ পাওয়া যায় না। তাই বুদ্ধের মত তিনি সংসারের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করিয়া ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে শীতকালে আত্মীয়স্বজনের অজ্ঞাতে সদ‍্গুরুর সন্ধানে অকস্মাৎ গৃহত্যাগ করেন। তিনি দিনের পর দিন দারুণ শীতে হিমালয়ের হিংস্রজন্তুপূর্ণ বনে জঙ্গলে পাহাড় পর্ব্বতে ঘুরিয়া বেড়াইলেন। উপযুক্ত আহার নাই, উপযুক্ত বস্ত্র নাই। সেদিকে তাঁহার কোন ভ্রূক্ষেপই ছিল না। তারপরে তিনি হরিদ্বার, মথুরা, বৃন্দাবন, গয়া প্রভৃতি তীর্থস্থানেও গুরুর সন্ধানে পাগলের মত পরিভ্রমণ করেন। তিনি আগ্রাতে প্রেমানন্দ বাবাজী, বৃন্দাবনে সাধুপ্রবর রামকৃষ্ণ দাস বাবাজী, বারাণসীতে রাখাল মহারাজের সাক্ষাৎ লাভ করেন। অনেক মন্দিরের মোহান্তর জীবন-প্রণালীও অবগত হন কিন্তু ইহাদের কেহই তাহার ধর্ম্মতৃষ্ণা তৃপ্ত করিতে পারিলেন না। উপরন্তু রাখাল মহারাজ বাপ-মার অনুমতি না লইয়া আসাতে সুভাষচন্দ্রকে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতে উপদেশ দেন। তিনি শেষে হতাশ হইয়া অকস্মাৎ একদিন গৃহে প্রত্যাবর্তন করিলেন, যেমন অকস্মাৎ তিনি গৃহত্যাগ করেন। দীর্ঘ ছয় মাস অনুপস্থিতির পর হঠাৎ আবির্ভাবে প্রভাবতী কাঁদিয়া বলিলেন, “সুভাস, তুমি কি আমাকে মেরে ফেলবার জন্য জন্মিয়েছ?” মাতাপিতা আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব সকলেই সুভাষচন্দ্রকে দেখিয়া আনন্দে আত্মহারা হইলেন।