পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তিনি আরও বলেছেন যে আজাদ-হিন্দ সেনাবাহিনী গঠন করার পূর্বে জাপানী জেনারল তারাওচী বলেছিলেন যে বৃটিশের ভাড়াটে ভারতীয় সৈন্যরা আজ জাতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিচ্ছে সুতরাং বীরত্বে, কর্মক্ষমতায় এবং সহনশীলতায় তারা জাপানের সমকক্ষ হতে পারে না। তাছাড়া জাপান এখন প্রভূত শক্তিশালী, সে আজাদ হিন্দ সেনার সাহায্যের প্রয়োজন বোধ করে না। তার উত্তরে নেতাজী বলেছিলেন যে অন্য দেশের সেনাবাহিনীর সাহায্যে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করা দাসত্বের চেয়েও আরও ঘৃণ্য। তারা যতই দুর্বল হোক ভারতীয় সেনারাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বুক পেতে দেবে, এগিয়ে যাবে এবং ভারতের পুণ্য ভূমিতে যে প্রথম রক্তপাত হবে সে রক্ত হবে আজাদ-হিন্দ সৈনিকের।

 নেতাজী যখন আজাদ-হিন্দ-সেনাবাহিনী সংগঠন করেছিলেন সেই সময় জাপানীদের হাতে বহু ভারতীয় বন্দী ছিল। তিনি জাপানীদের তাদেরকে মুক্তি দিতে হুকুম করেন। জাপানীরা জবাব দেয় তারা জাপানীদের হাতে বন্দী হয়েছে ভারতীয় নেতার হুকুমে তাদের ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তার প্রত্যুত্তরে নেতাজী জাপানী কম্যাণ্ডারকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি ভারতবাসীর স্বাধীনতার জন্যই বৃটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছেন, সেইরকম যদি কোন কারণ ঘটে তিনি জাপানীর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে দ্বিধা করবেন না। এর পর জাপানী সমরদপ্তর থেকে হুকুম আসে যে নেতাজী সুভাষচন্দ্রের হুকুমনামা যেন স্বয়ং মিকাডোর হুকুমনামার মতই পালিত হয়।

 আর একবার, এক জাপানী সমর দপ্তরের কর্মচারী নেতাজীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে উপযুক্ত পরিচয়পত্র কিছু ছিল না। সেইজন্য যতদিন না পর্যন্ত তিনি ফিরে গিয়ে উপযুক্ত পরিচয় পত্র নিয়ে আসেন নেতাজী তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে রাজী হন নি। এমনি ভাবেই তিনি নিজের এবং স্বাধীন ভারতের মর্যাদা রক্ষা করে চলতেন।

১৩০