পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে বৌদ্ধধর্ম। পাঞ্জাবে তখন বীর ও সৎক্ষত্রিয় ব’লে মহারাজা পুরুর বিশেষ খ্যাতি। পূর্ব-ভারতে অধ-আর্য নন্দবংশ রাজত্ব করছে। চন্দ্রগুপ্ত তখন যুবক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যুদ্ধবিদ্যা শিখে তিনি শক্তি সঞ্চয় করছেন— ভারতবর্ষের সিংহাসনের দিকে তাঁর লোলুপ দৃষ্টি।

 প্রতীচ্যের প্রধান নাট্যশালা তখন গ্রীসে। এই গ্রীকরাও ছিলেন উত্তর-ভারতীয় হিন্দু ও পারসীদের মতোন আর্য, তাঁদেরও পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন স্মরণাতীত কাল পূর্বে মধ্য-এসিয়ার আদি আর্যস্থান থেকে। অধিকাংশ য়ুরোপে তখন অসভ্য বর্বরদের বাস এবং রোম হচ্ছে শিশু,—মহা গ্রীসের শৌর্য-বীর্য ও সভ্যতার যবনিকা সরিয়ে তার দৃষ্টি ভবিষ্যতের বিরাট অপূর্বতা তখনও দেখতে পায়নি।

 গ্রীসে তখন নূতন নাটক রচনার চেষ্টা করছে মাসিডনিয়া— আর্যাবর্তে অর্ধ-আর্য পূর্ব-ভারতের চন্দ্রগুপ্তের মতো। এবং মাসিডনিয়ার বাসিন্দাদেরও কুলীন গ্রীকরা মনে করতেন অধ-গ্রীক ও অর্ধ-বর্বরের মতো।

 মাসিডনিয়ার অধিপতি ফিলিপ নিজের বাহুবলে গ্রীকজগতে কৌলীন্য অর্জন করেছিলেন। অকালে শত্রু-কবলে ফিলিপ যখন অপঘাতে মারা পড়লেন, তখন তাঁর পুত্র আলেকজাণ্ডার পেলেন সিংহাসনের সঙ্গে পিতার স্বহস্তে শিক্ষিত দুর্ধর্ষ, বিপুল সৈন্যবাহিনী। তাঁর বয়স তখন বিশ বৎসর মাত্র। কিন্তু এই বয়সেই তিনি লাভ করেছিলেন পিতার রাজনৈতিক বুদ্ধি ও যুদ্ধ প্রতিভা এবং মাতা ওলিম্পিয়াসের ধমোন্মাদ, আবেগ-বিহ্বলতা ও কল্পনা-শক্তি।

 কৌলীন্য-গর্বিত গ্রীকরা অর্ধ-সভ্য বালক-রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করলে। কিন্তু আলেকজাণ্ডার তখনি খাপ থেকে তরবারি খুলে সৈন্যদের নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মূর্তিমান ঝড়ের মতো এবং অত্যন্ত অনায়াসে সমস্ত বিদ্রোহ দমন ক’রে দেখিয়ে