পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোড়ার কথা

দিলেন, তিনি বালক বটে, কিন্তু দুর্বলও নন, নির্বোধও নন! যার বাহুবল ও বীরত্ব আছে, পৃথিবীতে তার চেয়ে বড় ক্ষত্রিয় আর কেউ নেই।

 খাঁটি হিন্দু সংস্কৃতি আর সভ্যতার অধঃপতনের সময়েই ভারতবর্ষে অর্ধ-আর্য চন্দ্রগুপ্ত ও সম্রাট অশোক প্রভৃতির আবির্ভাব। তাঁদের প্রতিভা ভারতীয় সংস্কৃতি আর সভ্যতাকে আজও ক’রে রেখেছে বিশ্বের বিস্ময়।

 এবং আদিম গ্রীক ও সংস্কৃতি ও সভ্যতার অধঃপতনের যুগেই অর্ধ-গ্রীকরূপে গণ্য আলেকজাণ্ডার আত্মপ্রকাশ করেন। গ্রীক সভ্যতার বাণী সারা পৃথিবীতে প্রচার করবার ভার নিলেন তিনিই। কুলীন গ্রীকরা তাঁকে ঘৃণা করতেন বটে, কিন্তু তিনি না থাকলে গ্রীকসভ্যতার মহিমা আজ এমন অতুলনীয় হ’তে পারত না। তাঁর প্রতিভায় গ্রীক সংস্কৃতির খ্যাতি প্রতীচ্যের সীমা পেরিয়ে ভারতের পঞ্চনদের তীরে ও মধ্য-এসিয়ায় বিস্তৃত হয়ে পড়েছিল।

 গ্রীসের প্রতিবেশী ছিল তখন প্রাচ্যের সব-চেয়ে পরাক্রান্ত রাজ্য পারস্য। পারসীরা একাধিকবার গ্রীকদের আক্রমণ করেছিল। গ্রীকরা কোনো রকমে আত্মরক্ষা করতে পেরেছিল বটে, কিন্তু তাদের দুর্দশা হয়েছিল যৎপরোনাস্তি। নিজেকে সমগ্র গ্রীসের দলপতিরূপে প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে তরুণ বীর আলেকজাণ্ডার বললেন, “গ্রীস আমার স্বদেশ। প্রাচ্যের পারসীরা আমার স্বদেশের উপর যখন অত্যাচার করেছে, আমিও পারস্য সাম্রাজ্য অধিকার ক’রে প্রতিশোধ নেবো।”

 পারস্য-সাম্রাজ্য তখন পারস্যেরও বাইরে এসিয়া-মাইনরে, মিশরে, বাবিলনে ও ভারতে সিন্ধুনদের তট পর্যন্ত বিস্তৃত। পারস্যের সিংহাসনে বসেছেন তখন তৃতীয় দরায়ুস কোডোমেন্নাস। তিনি মহা-সম্রাটরূপে পরিচিত বটে, কিন্তু তাঁর যুদ্ধপ্রতিভা ছিল না।