পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 ক্লিটাস্ বললেন, “নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আপনার আদেশ পালন করতে হবে?”

 —“হাঁ, সেইটেই হচ্ছে সৈনিকের ধর্ম। মৃত্যুর চেয়েও বড় সেনাপতির আদেশ।”

 হাজার হাজার সৈনিক হঠাৎ একসঙ্গে ব’লে উঠল, “অন্ধের মতো আমরা কারুর আদেশ পালন করবো না—আমরা কেউ ভারতবর্ষে যাবো না।”

 কিন্তু লক্ষ লক্ষ লোকের প্রাণ নিয়ে যাঁরা খেলা করতে পারেন, জনতার হৃদয় জয় করবার অনেক কৌশলই তাঁদের জানা থাকে।

 আর একজন দিগ্বিজয়ী— নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, মিষ্টি কথায় কারুকে বশ করতে না পারলে পাগলের মতন ক্ষেপে উঠতেন এবং তাঁর সেই প্রচণ্ড রাগ দেখে অবাধ্যরা মুস্‌ড়ে প’ড়ে বাধ্য না হয়ে পারত না। অথচ নেপোলিয়ন স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার ক'রে গেছেন, সে-সব রাগ তাঁর লোক-দেখানো মৌখিক অভিনয় মাত্র, মনে মনে হেসে বাইরে তিনি করতেন ক্রোধ প্রকাশ!

 দিগ্বিজয়ী আলেকজাণ্ডারও ছিলেন অভিনয়ে খুব পটু। ক্রুদ্ধ স্বরেও যখন ফল হ’ল না, তখন তিনি ভিন্ন উপায় অবলম্বন করলেন। অত্যন্ত নিরাশ ভাবে দুঃখে-ভাঙা স্বরে ধীরে ধীরে বললেন, “সৈন্যগণ! আমি সম্রাট বটে, কিন্তু তোমাদের সঙ্গে করেছি বন্ধুর মতো আচরণ! তোমাদের জন্যে আমি আমার ক্ষুধার অন্ন, তৃষ্ণার জল এগিয়ে দিয়েছি, তোমাদের গৌরবের জন্যে আমি সিংহাসনের বিলাসিতা ছেড়ে বারবার সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে ছুটে গিয়েছি। তোমরা কেবল আমার বন্ধু নও, আমার সন্তানের মতো। তোমাদের কোনো প্রার্থনাই আমি অপূর্ণ রাখতে পারবো না। ভারতবর্ষ জয় করা ছিল আমার উচ্চাকাঙ্খা, কিন্তু তোমরা যখন অসম্মত, তখন আমারও রাজি না হয়ে উপায় নেই। বেশ, তোমরা যা চাও তাই হবে।

২০