পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

দরিয়া প্রভৃতি নদী, হিন্দুকুশ প্রভৃতি পর্বত, বিজন অরণ্য, বৃহৎ মরুপ্রান্তর এবং আরো কত কি বিষম বাধা! এত বাধা-বিপত্তিকে ঠেলে দুর্গম পথের তিন যাত্রী কি আবার তাদের স্বদেশের আশ্রয়ে ফিরে আসতে পারবে? কত সূর্য ডুববে, কত চন্দ্র উঠবে, কত তারকা ফুটবে, বাতাস কখনো হবে আগুনের মতো গরম ও কখনো হবে তুষারের মতো শীতল, আকাশ কখনো করবে বজ্রপাত এবং কখনো পাঠিয়ে দেবে প্রবল ঝঞ্ঝার দলবল, বনে বনে গর্জন ক’রে জাগবে হিংস্র জন্তুুরা, আনাচে-কানাচে অতর্কিতে আবির্ভূত হবে তাদের চেয়ে আরো নিষ্ঠুর দস্যুরা এবং সেই সঙ্গে তাদের লক্ষ্য ক’রে রয়ে আসছে দৃঢ়-পণ নিয়ে ত্রিশজন অশ্বারোহী গ্রীক সৈনিক! ভারতের ছেলে আর কি ভারতে ফিরবে?

 শেষোক্ত বিপদের কথা আগে তারা টের পায় নি। প্রত্যাবর্তন আরম্ভ ক’রে তাদের বেগবান অশ্বেরা অনেকখানি পথ এগিয়ে যাবার সুযোগ পেয়েছিল। ত্রিশজন গ্রীক সৈনিক সাজসজ্জা ক’রে বেরুতেও কম সময় নেয়নি। ভারতের তিন ভাগ্যান্বেষী বীর স্বদেশে ফেরবার পথ-ঘাটও ভালো ক’রে জানত, গ্রীকদের যা জানা ছিল না। তিনজন ভারতবাসী কখন্ কোন্ পথ অবলম্বন করছে, গ্রামে গ্রামে দাঁড়িয়ে প’ড়ে সে খবর সংগ্রহ করতেও গ্রীকদের যথেষ্ট বিলম্ব হয়ে যাচ্ছিল।

 কিন্তু গ্রীকরা নিশ্চিত ভাবেই তিন বীরের পিছনে এগিয়ে চলেছে। কেবল তাই নয়, তারা ক্রমেই তাদের নিকটস্থ হচ্ছে।

 সেদিন সকালে আমু-দরিয়া নদী পার হয়ে তিন বন্ধুতে বিশ্রাম করছিল।

 হঠাৎ সুবন্ধু চম্‌কে দাঁড়িয়ে উঠে নদীর পরপারে উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলে।

৩২