পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 আবার দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে। দিকচক্রবাল-রেখার উপরে ফুটে উঠল হিন্দুকুশের মর্মভেদী শিখরমালা। গ্রীকরা হতাশ হয়, তিন ভারত-বীরের চোখে জ্বলে আশার আলো। হিন্দুকুশের অন্দরে গিয়ে ঢুকতে পারলে কে আর তাদের নাগাল ধরতে পারবে? হিন্দুকুশের ওপার থেকে ডাকছে তাদের মহাভারতের প্রাচীন আত্মা! স্বদেশগামী ঘোড়াদের খুরে খুরে জাগছে বিদ্যুৎগতির ছন্দ!

 বিস্তীর্ণ এক সমতল প্রান্তর— একান্ত অসহায়ের মতো দুপুরের রোদের আগুনে প’ড়ে প’ড়ে দগ্ধ হচ্ছে। প্রান্তরের শেষে একটা বেশ-উঁচু পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে পথ জুড়ে। তিন ঘোড়া পাশাপাশি ছুটছে সেই দিকেই।

 পাহাড়ের খুব কাছে এসে হঠাৎ পুরঞ্জনের ঘোড়া প্রথমে দাঁড়িয়ে —তারপর মাটির উপরে শুয়ে পড়ল। দু-একবার ছট্‌ফট্‌ ক’রেই একেবারে স্থির!

 পুরঞ্জন মাটির উপরে হাঁটু গেড়ে ব’সে ঘোড়াকে পরীক্ষা করতে লাগল, সুবন্ধু ও চিত্ররথও নিজের নিজের ঘোড়া থেকে নামল।

 মৃতের মতো বর্ণহীন মুখ ঊর্ধ্বে তুলে পুরঞ্জন অবরুদ্ধ স্বরে বললে, “আমার ঘোড়া এ-জীবনে আর উঠবে না!”

 সুবন্ধু বললে, “এখন ঘোড়া যাওয়ার মানেই হচ্ছে, শত্রুর হাতে বন্দী হওয়া। আমাদেরও ঘোড়ার অবস্থা ভালো নয়। এদের কোনটাই দুজন সওয়ার পিঠে নিয়ে তাড়াতাড়ি ছুটতে পারবে না।”

 চিত্ররথ পিছন দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিপাত ক’রে ত্রস্ত স্বরে বললে, “ওদিকে চেয়ে দেখো— ওদিকে চেয়ে দেখো!”

 সকলে সভয়ে দেখলে, দূর অরণ্যের বক্ষ ভেদ ক’রে একে একে বেরিয়ে আসছে গ্রীক সৈনিকের পর গ্রাক সৈনিক! তাদের দেখেই তারা উচ্চস্বরে জয়নাদ ক’রে উঠল!

৩৪