পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম ও দ্বিতীয় বলি

 সুবন্ধু ব্যস্তভাবে বললে, “কি করি এখন? পুরঞ্জনকে এখানে ফেলে রেখে কি ক’রেই বা আমরা পালিয়ে যাই?”

 পুরঞ্জন দৃঢ়স্বরে বললে, “শোনো হুবন্ধু! আমি এক উপায় স্থির করেছি। এখন এই উপায়ই হচ্ছে একমাত্র উপায়।”

 গ্রীকরা তখন ঘোড়া ছুটিয়ে দ্রুততর বেগে এগিয়ে আসছে। সেইদিকে দৃষ্টি রেখে সুবন্ধু বললে, “যা বলবার শীঘ্র বলো। নইলে দাঁড়িয়ে দাড়িয়েই বন্দী হ’তে হবে”।

 পুরঞ্জন সুদীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস টেনে বুক ফুলিয়ে বললে, “ভারতের ছেলে এত সহজে বন্দী হয় না! শোনো সুবন্ধু! সামনের উঁচু পাহাড় আর পিছনে গ্রীক সৈন্য—ঘোড়া ছুটিয়েও আমরা আর কোথাও পালাতে পারবো না! কিন্তু পাহাড়ের ঐ সরু পথটা দেখছ তো? পাশাপাশি দুজন লোক ও-পথে উপরে উঠতে পারে না! চলো, ঘোড়া ছেড়ে দিয়ে ঐ পথে আমরা উপরে গিয়ে উঠি। গ্রীকদেরও ঘোড়া ছেড়ে ঐ পথেই এক-একজন ক’রে উঠতে হবে। আমি আর চিত্ররথ পাহাড়ে উঠে ঐ পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে শত্রুদের বাধা দেবো।”

 সুবন্ধু বিস্মিত স্বরে বললে, “আর আমি?”

 —“ভগবানের আশীর্বাদ নিয়ে তুমি ছুটে যাও ভারতের দিকে। তুমি একলা দু-চারদিন লুকিয়ে এগুতে পারবে। তারপর নতুন তাজ| ঘোড়া কিনে যথাসময়ে ভাঙিয়ে দেবে ভারতের নিশ্চিন্ত নিদ্রা।”

 —“আর তোমরা?”

 -—“যতক্ষণ পারি শত্রুদের ঠেকিয়ে রাখবো। তারপর স্বদেশের জন্যে হাসতে হাসতে প্রাণ দেবো।”  -—“সে হয় না পুরঞ্জন! স্বদেশের জন্যে প্রাণ দেবার আনন্দ থেকে আমিই বা বঞ্চিত হবো কেন?”

৩৫