পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 পুরঞ্জন কর্কশ স্বরে বললে, “প্রতিবাদ কোরো না সুবন্ধু, এখন কথা-কাটাকাটির সময় নেই। গ্রীকরা যাচ্ছে ভারতবর্ষে, স্বদেশের জন্যে প্রাণ দেবার অনেক সুযোগ তুমি পাবে! এখন সব-চেয়ে বড় কর্তব্য তুমি পালন করো, শত্রুদের আমরা বাধা দিই।—চিত্ররথ! তুমি নীরব কেন? তোমার কি ভয় হচ্ছে?”

 চিত্ররথ সদর্পে বললে, “ভয়! ক্ষত্রিয় মরতে ভয় পায়? আমি চুপ ক’রে আছি—কারণ মৌনই হচ্ছে সম্মতির লক্ষণ!”

 পুরঞ্জন তরবারি কোষমুক্ত ক’রে পাহাড়ের দিকে ছুটতে ছুটতে বললে, “তা’হলে এসো আমার সঙ্গে! বলো—জয়, ভারতবর্ষের জয়!”

 ভারতবর্ষের নামে জয়ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস পরিপূর্ণ ক’রে তিনজন ভারত-সন্তান সামনের পাহাড়ের দিকে বেগে ছুটে চলল। সেখানে গিয়ে পৌঁছেই সুবন্ধু বুঝলে,পুরঞ্জন ভুল বলে নি, এই সরু পথ রুখে দাঁড়ালে দুজন মাত্র লোক অনেকক্ষণ ধ’রে বহু লোককে বাধা দিতে পারবে!

 প্রায় সত্তর-আশী ফুট উপরে গিয়ে পথটা আবার আরো সরু হয়ে গেছে।

 পুরঞ্জন বললে, “এই হচ্ছে আমাদের দাঁড়াবার জায়গা! এখন অগ্রসর হও সুবন্ধু, আমাদের পিতৃভূমির পবিত্র পথে! জয়, ভারতবর্ষের জয়!”

 সুবন্ধু ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললে, “ভাগ্যবান বন্ধু! দুদিন পরে বিরাট ভারতবর্ষ দেবে কৃতজ্ঞ হৃদয়ে তোমাদেরই নামে জয়ধ্বনি! এসো একবার শেষ আলিঙ্গন দাও! তারপর আমি চলি ঘুমন্ত ভারতের পথে, আর তোমরা চল জাগন্তু মৃত্যুর পথে!”

 পুরঞ্জন সজোরে সুবন্ধুকে বুকের ভিতরে চেপে ধ’রে বললে, “না

৩৬