পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়

 বিরাট হিন্দুকুশের তুষার-অরণ্য ভেদ ক’রে আপাতত আমরা আর সুবন্ধুর অনুসরণ করবো না। ভারতের ছেলে ভারতে ফিরে আসছে, যথাসময়েই আবার তাকে অভ্যর্থনা ক’রে নেবো সাদরে। এখন এই অবকাশে আমরা গল্প-সূত্র ছেড়ে অন্যান্য দু-চারটে দরকারি কথা আলোচনা ক’রে নিই। কি বলো?

 স্বদেশকে আমরা সবাই ভালোবাসি নিশ্চয়, কারণ, বনমানুষ ও সাধারণ জানোয়াররা পর্যন্ত স্বদেশ থেকে নির্বাসিত হ’লে সুখী হয় না। আফ্রিকার গরিলাদের অন্য দেশে ধ’রে নিয়ে গেলে প্রায়ই তারা মারা পড়ে! তাদের যত যত্নই করা হোক, যত ভালো খাবারই দেওয়া হোক, তবু তাদের মনের দুঃখ ঘোচে না। এই দুঃখই হচ্ছে তাদের স্বদেশ-প্রীতি। গরিলাদের স্বদেশ প্রীতি আছে, আমাদের থাকবে না?

 অবশ্য আমাদের— অর্থাৎ মানুষদের মধ্যে গরিলারও চেয়ে নিম্নশ্রেণীর জীব আছে দু-চারজন। লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করতে হচ্ছে, তারা বাস করে এই ভারতবর্ষেই। তারা দু-তিন বছর বিলাতী কুয়াশার মধ্যে বাস ক’রে দেশের মাটি, দেশের মায়া, দেশের ভাষা, দেশের সাজ-পোষাক ভুলতে চায় এবং নিজেদের ব্যর্থ নকল সাহেবিয়ানা নিয়ে গর্ব করতে লজ্জিত হয় না। তোমরা যখনি সুযোগ পাবে, এদের মূর্খতার শাস্তি দিতে ভুলো না।

৪২