পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়

 হাঁ, স্বদেশকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু সে ভালোবাসার পরিমাণ হয়তো যথেষ্ট নয়। এই বর্তমান যুগেই দেশের কতটুকু খবর আমরা রাখতে পারি? প্রাচীন ভারতের খবর আমরা প্রায় কিছুই জানি না বললেও হয়। বিদেশী রাজার তত্ত্বাবধানে ইস্কুলকলেজে যে-সব ইতিহাস আমরা মুখস্থ করি, তার ভিতরে স্বাধীন ভারতের অধিকাংশ গৌরব ও বর্ণ-বৈচিত্র্যকে অন্ধকারের কালো রং মাখিয়ে ঢেকে রাখা হয় এবং নানা ভাবে আমাদের বোঝাবার চেষ্টা করা হয় যে, য়ুরোপীয়রা আসবার আগে ভারতে না ছিল উচ্চতর সভ্যতা, না ছিল প্রকৃত সুশাসন, না ছিল যথার্থ সাম্রাজ্য। কিন্তু তোমরা যদি চন্দ্রগুপ্ত, অশোক, সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তবিক্রমাদিত্য, কুমারগুপ্ত, স্কন্দগুপ্ত ও হর্ষবর্ধন প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় সম্রাটদের জীবনচরিত পড়ো তাহ’লে বুঝবে যে, সমগ্র পৃথিবীর কোনো সম্রাটই তাঁদের চেয়ে উচ্চতর সম্মানের দাবি করতে পারেন না। তাঁদের যুগে ভারত সভ্যতা, সাহিত্য, জ্ঞানবিজ্ঞান, ললিতকলা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে যত উচ্চে উঠেছিল, আজকের অধঃপতিত আমরা তা কল্পনাও করতে পারবো না। এইচ, জি, ওয়েলস্ স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট বলতে অশোককেই বোঝায়। অশোক ছিলেন আসমুদ্র হিমাচলের অধীশ্বর, কিন্তু তিনি রাজ্যশাসন করেছেন প্রেমের দ্বারা! রণক্ষেত্রে ভারতের নেপোলিয়ন উপাধি লাভ করেছেন সমুদ্রগুপ্ত, তাঁর দেশ ছিল বাঙলার পাশেই পাটলিপুত্রে। সমগ্র ভারত জয় ক’রেও তিনি তৃপ্ত হন নি, ললিতকলা ও সাহিত্যক্ষেত্রেও তাঁর নাম প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। সম্রাট হর্ষবর্ধনও কেবলল দুর্ধর্ষ দিগ্বিজয়ী ছিলেন না, সংস্কৃত সাহিত্যেও তিনি একজন অমর নাট্যকার ও কবি ব’লে পরিচিত (“নাগানন্দ”, “রত্নাবলী” ও “প্রিয়দশিকা” প্রভৃতি তাঁরই বিখ্যাত রচনা)। তাঁর মতন একাধারে শ্রেষ্ঠ কবি ও দিগ্বিজয়ী

৪৩