পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

সম্রাট পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। সমুদ্রগুপ্ত সম্বন্ধেও ঐ কথা বলা যায় ৷

 এমন সব সন্তানের পিতৃভূমি যে ভারতবর্ষ, আলেকজাণ্ডার দিগ্বিজয়ীরূপে সেখানে এসে কেমন ক’রে অম্লান গৌরবে স্বদেশে ফিরে গেলেন? তোমাদের মনে স্বভাবতই এই প্রশ্নের উদয় হ’তে পারে। এর জবাবে বলা যায়ঃ ঐতিহাসিক যুগে বিরাট ভারত-সাম্রাজ্যের একছত্র অধিপতিরূপে সর্বাগ্রে দেখি চন্দ্রগুপ্তকে। তিনি আলেকজাণ্ডারের সমসাময়িক হ’লেও গ্রীকদের ভারতআক্রমণের সময়ে ছিলেন স্বদেশ থেকে নির্বাসিত, সহায়-সম্পদহীন ব্যক্তি। তাঁর হাতে রাজ্য থাকলে আলেকজাণ্ডার হয়তো বিশেষ সুবিধা ক’রে উঠতে পারতেন না। আলেকজাণ্ডার উত্তর-ভারতের এক অংশ মাত্র অধিকার করেছিলেন, তাও তখন বিভক্ত ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে এবং সে-সব রাজ্যের রাজাদের মধ্যে ছিল না একতা। তখন আলেকজাণ্ডারের প্রধান শত্রু রাজা পুরুর চেয়েও ঢের বেশী বিখ্যাত ও শক্তিশালী ছিলেন পাটলিপুত্রের।(বর্তমান পাটনার) নন্দবংশীয় রাজা। তাঁর নিয়মিত বাহিনীতে ছিল আশী হাজার অশ্বারোহী, দুই লক্ষ পদাতিক, আট হাজার যুদ্ধরথ ও ছয় হাজার রণহস্তী। দরকার হ’লে এদের সংখ্যা ঢের বাড়তে পারত, কারণ এর কয়েক বৎসর পরেই দেখি, মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই পাটলিপুত্রের ফৌজ দাঁড়িয়েছে এইরকমঃ ছয় লক্ষ পদাতিক, ত্রিশহাজার অশ্বারোহী, নয় হাজার রণহস্তী এবং অসংখ্য রথ। সুতরাং পাটলিপুত্রের রাজা নন্দের সঙ্গে আলেকজাণ্ডারের শক্তিপরীক্ষা হ’লে কি হ’ত বলা যায় না! আলেকজাণ্ডার পাটলিপুত্রের দিকে আসবার প্রস্তাবও করেছিলেন বটে, কিন্তু সেই প্রস্তাব শুনেই সমগ্র গ্রীকবাহিনী বিদ্রোহের ভাব প্রকাশ করেছিল এবং তার প্রধান কারণই এই যে ক্ষুদ্র রাজা পুরুর দেশেই গ্রীকরা ভারতীয়

৪৪