পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়

বীরত্বের যেটুকু তিক্ত আস্বাদ পেয়েছিল, তাদের পক্ষে সেইটুকুই হয়ে উঠেছিল যথেষ্টের বেশী।

 তারপর আর এক প্রশ্ন। ভারতবর্ষে আমরা গ্রীক-বীরত্বের যে-ইতিহাস পাই, তা বহু স্থলেই অতিরঞ্জিত, কোথাও কল্পিত এবং কোথাও অমূলক কিনা? আমার বিশ্বাস, হাঁ। কারণ এক্ষেত্রে ঐতিহাসিক চিত্রকর নিজের ছবিই নিজে এঁকেছেন। এই খবরের কাগজের যুগে, সদা-সজাগ বেতার, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোনের রাজ্যেও নিত্যই দেখছি যুদ্ধে নিযুক্ত দুই পক্ষই প্রাণপণে সত্যগোপন করছে, হেরে বলছে হারিনি, সামান্য জয়কে বলছে অসামান্য! সুতরাং সেই কল্পনাপ্রিয় আদ্যিকালে গ্রীকরা যে সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরের মতো ইতিহাস লিখেছিল, তা কেমন ক’রে বলি? গ্রীকরা যে কোথাও হারে নি, তাই বা কেমন ক’রে মানি? আধুনিক য়ুরোপীয় লেখকরাই গ্রীক ঐতিহাসিকদের কোনো কোনো অতিরঞ্জিত ও অসত্য কথা দেখিয়ে দিয়েছেন। আর একটা লক্ষ্য করিবার বিষয় হচ্ছে, ভারতের বুকের উপর দিয়ে এত-বড় একটা ঝড় ব’য়ে গেল, তবু হিন্দু, বৌদ্ধ বা জৈন সাহিত্যে তার এতটুকু ইঙ্গিত বা উল্লেখ দেখা যায় না! এও অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক।

 এবং গ্রীকরা যে অকারণে ভয় পায় নি, তার কিছুদিন পরেই সেপ্রমাণ পাওয়া যায়। সে এখন নয়, যথাসময়ে বলবো।

 গ্রীকদের সঙ্গে ভারতবাসীদের প্রথম মৃত্যু-মিলন হয় যে-নাট্যশালায়, এখন সেই অঞ্চলের তখনকার অবস্থার সঙ্গে তোমাদের পরিচিত করতে চাই। গল্প-বলা বন্ধ রেখে বাজে কথা বলছি ব’লে তোমাদের অনেকেই হয়তো রাগ করবে। কিন্তু আমাদের দেশের পুরাণো ইতিহাসের সঙ্গে লোকের পরিচয় এত অল্প যে, স্থান-কাল সম্বন্ধে একটু ভূমিকা না দিলে এই ঐতিহাসিক কাহিনীর আসল রসটুকু কিছুতেই জমবে না।

৪৫