পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 সীমান্তের যে প্রদেশগুলি উত্তর-ভারতবর্ষের সিংহদ্বারের মতো এবং সর্বপ্রথমেই যাদের মধ্য দিয়ে আসবার সময়ে গ্রীকদের তরবারি ব্যবহার করতে হয়েছিল প্রাণপণে, সে-যুগে তাদের কতকগুলি বিশেষত্ব ছিল।

 ভারতের উত্তর-সীমান্তের দেশগুলিতে আজকাল প্রধানত মুসলমানদের বাস। কিন্তু মহম্মদের জন্মের বহু শত বৎসর আগেই আলেকজাণ্ডার এসেছিলেন ভারতবর্ষে। সুতরাং পৃথিবীতে তখন একজনও মুসলমান ছিলেন না (একজন ক্রীশ্চানও ছিলেন না, কারণ যীশুখৃষ্ট জন্মাবার তিনশো সাতাশ বৎসর আগে আলেকজাণ্ডার সসৈন্যে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করেছিলেন)।

 ভারতে প্রচলিত তখন প্রধানত বৈদিক হিন্দু-ধর্ম। য়ুরোপীয় গ্রীকরা ছিলেন পৌত্তলিক। কিন্তু আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, হিন্দুরা খুব-সম্ভব তখন প্রতিমা ও মন্দির গ’ড়ে পূজা করতেন না, অথবা করলেও তার বেশী চলন হয় নি। অনেক ঐতিহাসিকের মত হচ্ছে, এদেশে মন্দির ও প্রতিমার চলন হয় গ্রীকদের দেখাদেখি। ভারতে তখন জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মেরও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠা হয়েছে বটে, কিন্তু জিন ও বুদ্ধেরও কোনো মূর্তি গড়া হয় নি। প্রথম বুদ্ধ-মূর্তিরও জন্ম গ্রীক প্রভাবের ফলে।

 সীমান্তের দেশগুলিতে বাস করত তখন কেবল ভারতের লোক নয়, বাইরেকার নানান জাতি। একদিক থেকে আসত চীনের বাসিন্দারা আর একদিক থেকে আসত মধ্য-এসিয়ার শক ও হুন প্রভৃতি যাযাবর জাতিরা এবং আর এক দিক থেকে আসত পার্সী ও গ্রীক প্রভৃতি আর্যরা। এমনি নানা ধর্মের নানা জাতির লোকের সঙ্গে মেলা-মেশা করার ফলে সীমান্তবাসী বহু ভারতীয়ের মনের ভাব হয়ে উঠেছিল অনেকটা সার্বজনীন। এ-অবস্থায় দেশাত্মবোধের ও হিন্দুত্বের

৪৬