পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়

ভাবও অনেকটা কম-জোরি হ’য়ে পড়াই স্বাভাবিক। হয়তো সেই কারণেই সীমান্ত-প্রদেশে আজ হিন্দুর সংখ্যা এত অল্প।

 তোমরা শুনলে অবাক হবে, সে-যুগেও ভারতে বিশ্বাসঘাতকের অভাব হয় নি। এ লোকটি আগে ছিল পার্সীদের মাহিনা-করা সৈনিক, পরে হয় আলেকজাণ্ডারের বিশ্বস্ত এক হিন্দু সেনাপতি। এর নাম শশীগুপ্ত, গ্রীকরা ডাকত সিসিকোটস্ ব’লে। গ্রীকদের সঙ্গে সেও ভারতের বিরুদ্ধে তরবারি ধারণ করে এবং সেও ছিল উত্তর ভারতের বাসিন্দা। আলেকজাণ্ডারের ভারত-আগমনের পরে সীমান্তের আরো বহু বিশ্বাসঘাতক হিন্দু গ্রীক-বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল বা দিতে বাধ্য হয়েছিল।

 সে-যুগে সীমান্তের একটি বিখ্যাত রাজ্য ছিল তক্ষশীলা। বত মান রাওলপিণ্ডি সহর থেকে বিশ-বাইশ মাইল দূরে আজও প্রাচীন তক্ষশীলার ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। কিন্তু এই ধ্বংসাবশেষ দেখে অভিভূত হ’লেও তক্ষশীলার অতীত গৌরবের কাহিনী আমরা কিছুই অনুমান করতে পারবো না। কারণ প্রাচীন প্রাচ্য জগতে তক্ষশীলা ছিল অন্যতম প্রধান নগর। জাতকের মতে, তক্ষশীলা হচ্ছে গান্ধার রাজ্যের অন্তর্গত সহর, “মহাভারতে”র রাজা ধৃতরাষ্ট্রের মহিযী ও দুর্যোধনের মাতা গান্ধারী এই দেশেরই মেয়ে। বর্তমান পেশোয়ারও ঐ গান্ধারেরই আর একটি স্থান, কিন্তু তখন তার নাম ছিল “পুরুষপুর”। ওখানকার লোকদের দেহ ছিল যে সত্যিকার পুরুষেরই মতো, আজও পেশোয়ারীদের দেখলে সেটা অনুমান করা যায়।

 তক্ষশীলা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার জন্যও অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেছিল। প্রাচীন ভারতের অন্যতম শিক্ষা কেন্দ্র বারাণসীও নান| বিদ্যার জন্যে তক্ষশীলার কাছে ঋণী। বিশেষ ক’রে চিকিৎসা-বিদ্যা শেখবার জন্যে তক্ষশীলায় তখন সারা ভারতের ছাত্রদের গমন করতে

৪৭