পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্থান-কাল-পাত্রের পরিচয়

রাজ্যের অনেকগুলিই পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে, তার উপরে বাকি যাদের অস্তিত্ব আছে, মুসলমান ধর্ম অবলম্বন ক’রে তারাও আপনাদের নূতন নূতন নাম রেখেছে—যেমন ‘পুরুষপুর’ হয়েছে ‘পেশোয়ার’। কোনো কোনো গ্রীক নামের সঙ্গে আবার আসল নামের কিছুই সম্পর্ক নেই। যেমন ঝিলাম নদ গ্রীকদের পাল্লায় প’ড়ে হয়েছে Hydaspes এবং চিনাব নদ হয়েছে Akesines!

 যাক, নাম নিয়ে বড় আসে-যায় না। কারণ নাম বা রাজ্য লুপ্ত হোক, সীমান্তের দেশগুলি আগেও যেমন ছিল এখনো আছে অবিকল তেমনি। উপরন্তু সেখানকার জড় পাহাড় ও পাথরের মতনই জ্যান্তো মানুষগুলিরও ধাত একটুও বদলায় নি! আজও তাদের কাছে জীবনের সব-চেয়ে বড় আমোদ হচ্ছে মারামারি, খুনোখুনি, যুদ্ধবিগ্রহ! যখন বাইরের শত্রু পাওয়া যায় না, তখন তারা নিজেদের মধ্যেই দাঙ্গাহাঙ্গাম। বাধিয়ে দেয়। প্রথম বয়সে আমি ও-অঞ্চলে বৎসরখানেক বাস করেছিলুম। সেই সময়েই প্রমাণ পেয়েছিলুম, মানুষের প্রাণকে তারা নদীর জলের চেয়ে মূল্যবান ব’লে ভাবে না। বর্তমান পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি ব্রিটিশ-রাজ পর্যন্ত তাদের অত্যাচারে সর্বদাই তটস্থ, সর্বদাই বাপু-বাছা ব’লে ও মোটা টাকা ভাতা দিয়ে তাদের মাথা ঠাণ্ডা রাখবার চেষ্টায় থাকেন। কারণ উড়োজাহাজের বোমা, মেসিন-গানের গোলা ও ব্রিটিশ-সিংহের গর্জন এদের কোনোটিই তাদের যুদ্ধ-উন্মাদনাকে শান্ত করতে পারে না। মরণ-খেলা তারা খেলবেই এবং মরতে মরতে মারবেই।

 আলেকজাণ্ডারের যুগে তারা মুসলমান ছিল না, হয়তো আর্য ও সভ্যও ছিল না, কিন্তু হিন্দুই ছিল ব’লে মনে করি। এবং তাদের শৌর্য-বীর্য ছিল এখনকার মতোই ভয়ানক! ভারতের বিপুল সিংহদ্বারের সামনে এই নির্ভীক, যুদ্ধপ্রিয় দৌবারিকদের দেখে গ্রীক দিগ্বিজয়ীকে যথেষ্ট দুর্ভাবনায় পড়তে হয়েছিল। এদের পিছনে

৪৯