পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

রেখে ভারতবর্ষের বুকের ভিতরে প্রবেশ করা আর আত্মহত্যা করা যে একই কথা, সেটা বুঝতে তাঁর মতো নিপুণ সেনাপতির বিলম্ব হয় নি। তাই ভারত-বিজয়ের স্বপ্ন ভুলে বিরাট বাহিনী নিয়ে সর্বাগ্রে তাঁকে এদেরই আক্রমণ করতে হয়েছিল এবং তখনকার মতো এদের ঢিট্ করবার জন্যে তাঁর কেটে গিয়েছিল বহুকাল।

 যে রঙ্গমঞ্চের উপরে অতঃপর আমাদের মহানাটকের অভিনয় আরম্ভ হবে, তার পৃষ্ঠপটের একটি রেখাচিত্র এখানে এঁকে রাখলুম। এটি তোমরা স্মরণ ক’রে রেখো। শত শত যুগ ধ’রে এই পৃষ্ঠপটের সুমুখ দিয়ে এসেছে দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন দেখে, দেশ-লুণ্ঠনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, অথবা সোনার ভারতে স্থায়ী ঘর বাঁধবে ব’লে পঙ্গপালের মতো লক্ষ লক্ষ বিদেশী। তাদের দৌরাত্ম্যে আজ সোনার ভারতের নামমাত্র অবশিষ্ট আছে, কিন্তু এখানে আর সোনা পাওয়া যায় না।

 তোমরা গল্প শোনবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছ?

 মনে আছে, ভারত-পুত্র সুবন্ধু ফিরে আসছে আবার তার পিতৃভূমিতে,—দুই চক্ষে তার উন্মত্ত উত্তেজনা, দুই চরণে তার কালবৈশাখীর প্রচণ্ড গতি?

 তারপর সুবন্ধু কিনেছে একটি ঘোড়া, কিন্তু পথশ্রমে ও দ্রুতগতির জন্যে সে মারা পড়ল। দ্বিতীয় ঘোড়া কিনলে, তারও সেই দশা হ’ল। কিন্তু তার তৃতীয় অশ্ব মাটির উপর দিয়ে যেন উড়ে আসছে পক্ষীরাজের মতো!

 বহুযুগের ওপার থেকে তার ঘোড়ার পদশব্দ তোমরা শুনতে পাচ্ছ?

 সুবন্ধু এসে হাজির হয়েছে ভারতের দ্বারে। কিন্তু তখনও কারুর ঘুম ভাঙে নি।......জাগো ভারত! জাগো পঞ্চনদের তীর!

৫০