পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

প্রভৃতি দেশ কাঠের ঘর-বাড়ী-মন্দির গ’ড়ে আজও প্রাচীন প্রাচ্য সভ্যতার সেই চিরাচরিত রীতির সম্মান রক্ষা করে।

 খৃষ্ট জন্মাবার আগে তিনশো-সাতাশ অব্দের জুন মাসের একটি সুন্দর প্রভাত শীত-কুয়াশার মৃত্যু হয়েছে। চারিদিক শান্ত সূর্যকরে সমুজ্জ্বল। সহরের পথে পথে নাগরিকদের জনতা। তখন পৃথিবীর কোথাও কেউ পর্দা-প্রথার নাম শোনেনি, তাই জনতার মধ্যে নারীর সংখ্যাও অল্প নয়। নারী ও পুরুষ উভয়েরই দেহ সুদীর্ঘ, বর্ণ গৌর, পরোনে জামা, উত্তরীয়, পা-জামা। দুর্বল ও খর্ব চেহারা চোখে পড়েনা বললেই হয়।

 চারিদিকে নবজাগ্রত জীবনের লক্ষণ। দোকানে বাজারে পসারী ও ক্রেতাদের কোলাহল, জনতার আনাগোনা, নদীর ঘাটে স্নানার্থীদের ভিড়, দলে দলে মেয়ে জল তুলে কলসী মাথায় নিয়ে বাড়ীতে ফিরে আসছে, পথ দিয়ে রাজভৃত্য দামামা বাজিয়ে নূতন রাজাদেশ প্রচার করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে, স্থানে স্থানে এক-এক দল লোক দাঁড়িয়ে তাই নিয়ে আলোচনা করছে এবং অনেক বাড়ীর ভিতর থেকে শোনা যাচ্ছে বৈদিক মন্ত্রপাঠের গম্ভীর ধ্বনি।

 নগর-তোরণে দুজন প্রহরী অভিসার ও তক্ষশীলা রাজ্যের নূতন যুদ্ধের ব্যাপার নিয়ে গল্প করছে এবং অনেকগুলি নাগরিক তাই শোনবার জন্যে তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।

 প্রথম প্রহরী বলছে; “তক্ষশীলার বুড়ো রাজার ভীমরতি হয়েছে।”

 দ্বিতীয় প্রহরী বললে, “কেন?”

 — “এই সেদিন মহারাজ পুরুর কাছে তক্ষশীলার সৈন্যরা কী মার খেয়ে পালিয়ে এল, কিন্তু বুড়ো রাজার লজ্জা নেই, আবার এরি মধ্যে অভিসারের রাজার সঙ্গে ঝগড়া বাধিয়েছে, সেদিন নাকি একটা মস্ত লড়াইও হয়ে গেছে।”

৫২