পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজার ঘোড়া

 —“লড়ায়ে কি হ’ল?”

 —“পাকা খবর এখনো পাই নি। কিন্তু যুদ্ধে যে-পক্ষই জিতুক, দুই রাজ্যেরই হাজার হাজার লোক মরবে, ঘরে ঘরে কান্না উঠবে, জিনিষ-পত্তরের দাম চড়বে।”

 একজন মুরুব্বি-গোছের নাগরিক বললে, “রাজাদের হবে খেয়াল, মরবে কিন্তু প্রজারা!”

 প্রহরী বললে, “কিন্তু সব রাজা সমান নয়, মহারাজা হস্তীর রাজত্বে আমরা পরম সুখে আছি! আমাদের মহারাজা মস্ত যোদ্ধা, কিন্তু তিনি কখনো অন্যায় যুদ্ধ করেন না!”

 নাগরিক সায় দিয়ে বললে, “সত্য কথা। মহারাজা হস্তী অমর হোন!”

 ঠিক সেই সময় দেখা গেল, মূর্তিমান ঝড়ের মতো চারিদিকে ধূলো উড়িয়ে ছুটে আসছে এক মহাবেগবান ঘোড়া এবং তার পিঠে ব'সে আছে যে সওয়ার, ডানহাতে জ্বলন্ত তরবারি তুলে শূন্যে আন্দোলন করতে করতে চীৎকার করছে সে তীব্র স্বরে।

 নগর-তোরণে সমবেত জনতার মধ্যে নানা কণ্ঠে বিস্ময়ের প্রশ্ন জাগলঃ

 —“কে ও? কে ও?”

 -“ও তো দেখছি ভারতবাসী! কিন্তু অত চেঁচিয়ে ও কী বলছে?”

 —“পাগলের মতো লোকটা তরোয়াল ঘোরাচ্ছে কেন?”

 অশ্বারোহী কাছে এসে পড়ল— তার চীৎকারের অর্থও স্পষ্ট হ’ল।

 সে বলছে—“জাগো! জাগো! শত্রু শিয়রে! অস্ত্র ধরো, অস্ত্র ধরো!”

 একজন প্রহরী সবিস্ময়ে বললে, “কে শত্রু? তক্ষশীলার বুড়ো রাজা আমাদের আক্রমণ করতে আসছে নাকি?”

৫৩