পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

অপূর্ব রচনাকে নিঃশেষে ধ্বংস ক’রে। সারা বছরের শ্রম আর আশা বিফল হয়ে যায় একদিনের যুদ্ধযাত্রায়,—চোখে জাগে কেবল অনাহার আর দুর্ভাগ্যের ছবি।”

 পূর্বাকাশ ছেড়ে পশ্চিমের অস্তাচলে এসে সূর্যের রাঙামুখ ক্রমেই ম্লান হয়ে পড়ছে—আর অল্পক্ষণের মধ্যেই পাখীদের কণ্ঠে জেগে উঠবে বেলা-শেষের বিদায়ী সঙ্গীত।

 অশ্বের পিঠ চাপড়ে সুবন্ধু বললে, “চল্‌রে রাজার ঘোড়া, আরো একটু তাড়াতাড়ি চল রে ভাই। অন্ধকারে অন্ধ হবার আগে একটা আশ্রয় খুঁজে নিতে হবে যে।”

 সন্ধ্যার কিছু আগেই পাওয়া গেল একটি গ্রামের প্রান্তে এক পান্থশালা। সুবন্ধু জানত, পনেরো ক্রোশের মধ্যে আর কোনো পান্থশালা বা নগর নেই। সুতরাং এইখানেই রাত্রিযাপন করবে ব’লে সে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে পড়ল।

 সেকালে সৈনিকের সব-চেয়ে প্রিয় ছিল অসি ও অশ্ব। নিজের শ্রান্তিকে আমলে না এনে সূবন্ধু আগে তাই তার অতি-শ্রান্ত ঘোড়ার পরিচর্যায় নিযুক্ত হ’ল। জল এনে তার সর্বাঙ্গের ধূলোকাদ। ধুয়ে দিলে, তারপর তাকে দলন-মর্দন করতে লাগল।

 পান্থশালার সমুখ দিয়ে যে প্রশস্ত রাজপথ চ’লে গিয়েছে তা এই গ্রামের নিজস্ব পথ নয়, কারণ মহারাজা পুরুর রাজ্য থেকে সীমান্তে যাবার জন্যে এইটিই হচ্ছে প্রধান পথ।

 হঠাৎ দূর থেকে অনেকগুলো ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনে লুবন্ধু চমকে মুখ তুলে দেখলে, পথের উপরে ধূলিমেঘের সৃষ্টি হয়েছে। সে কৌতূহলী চোখে সেইদিকে তাকিয়ে রইল।

 তারপরই দেখা গেল একদল অশ্বারোহীকে। সংখ্যায় তারা পঞ্চাশজনের কম হবে না। কে এরা?

৬৬