পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অখণ্ড ভারত-সাম্রাজ্যের স্বপ্ন

নন্দ-বংশের কেউ নয়? সে ক্ষৌরকার-পুত্র, ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ফলে মগধের সিংহাসন লাভ করেছে?”[১]

 সুবন্ধু থতমত খেয়ে বললে, “শুনেছি, রাজকুমার! কিন্তু—”

 উত্তেজিত চন্দ্রগুপ্ত আবার তাকে বাধা দিয়ে বললেন, “হাঁ, সেই পাপিষ্ঠ আমার প্রাণদণ্ডের হুকুম দিয়েছিল—কারণ আমি আসল রাজবংশের ছেলে আর প্রজারা আমাকে ভালোবাসে। তারই জন্যে আজ আমি ভবঘুরের মতো দেশে দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি! মগধের রাজ-সিংহাসন ক্ষৌরকার-পুত্রের কবল থেকে উদ্ধার করবার জন্যে আমি গিয়েছিলুম গ্রীক দিগ্বিজয়ী আলেকজাণ্ডারের কাছে সাহায্য চাইতে।”

 সুবন্ধু ক্ষুব্ধ স্বরে বললে, “অর্থাৎ আপনি বিদেশী দস্যুকে যেচে দেশে ডেকে আনতে গিয়েছিলেন?”

 চন্দ্রগুপ্ত দুই ভুরু সঙ্কুচিত ক’রে বললেন, “সুবন্ধু, আগে আমার সব কথা শোনো, তারপর মত প্রকাশ কোরো। ভেবে দেখো, নন্দের অধীনে আছে বিশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্য, দুই লক্ষ পদাতিক সৈন্য, দুই হাজার যুদ্ধরথ আর চার হাজার রণহস্তী। এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি আমার এমন সহায় সম্পদ নেই। তাই আমি আগে গ্রীকদের সাহায্যে আমার পূর্বপুরুষদের সিংহাসন উদ্ধার করতে চেয়েছিলুম। মহাপদ্ম নন্দের যে পুত্র এখন মগধের রাজা সে বিলাসী, অত্যাচারী, কুচরিত্র। তার উপরে নীচ বংশে জন্ম ব’লে প্রজারা তাকে ঘৃণা করে। বর্তমান নন্দ-রাজা যুদ্ধ-নীতিতেও অজ্ঞ। কাজেই গ্রীকদের সঙ্গে মগধের ন্যায্য রাজা আমাকে দেখলে সমস্ত প্রজা আর সৈন্যদল


  1. প্রাচীন সংস্কৃত নাটক “মুদ্রারাক্ষসে” ও আধুনিক বাংলা নাটক “চন্দ্রগুপ্তে” প্রকাশ, চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন শূদ্র বা দাসী-পুত্র। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকরা এ মতে সায় দেন না। তাঁরা বলেন চন্দ্রগুপ্ত আসল নন্দ-বংশেরই ছেলে এবং যে-নন্দকে তিনি রাজ্যচ্যুত করেছিলেন, শূদ্রের ঔরসে জন্ম হয়েছিল তাঁরই। ইতি— লেখক।
৬৯