পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 সেনাপতি বললেন, “দেখো বসুমিত্র, তিনটে পথই কুরুক্ষেত্রের মহাপ্রান্তরের তিনদিকে গিয়ে পড়েছে। পঁচিশজন সওয়ার ডানদিকে যাক্, আর পঁচিশজন যাক্ বাম দিকে। বাকি পঞ্চাশজনকে নিয়ে আমি যাবে। সাম্‌নের পথ ধ’রে। গুপ্তচরের খবর যদি ঠিক হয়, তাহ’লে কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরেই আমাদের শিকারকে ধরতে পারবো। সে ধূ-ধূ- প্রান্তরের মধ্যে কেউ আমাদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না।”

 বসুমিত্র সেনাপতির হুকুম সকলকে জানালে। তখনি সওয়াররা তিন দলে বিভক্ত হয়ে আবার গন্তব্য পথে অগ্রসর হ’ল। পাঠকদের সঙ্গে আমরাও যাই সেনাপতির সঙ্গে!

 ঘণ্টা-দুই পরেই পথ গেল ফুরিয়ে এবং আরম্ভ হ’ল পবিত্র কুরুক্ষেত্রের ভয়াবহ প্রান্তর। হাঁ, এ প্রান্তর পবিত্র এবং ভয়াবহ! মহাভারতের অমর আত্মা একদিন এখানে যত উচ্চে উঠেছিল, নেমেছিল আবার ততখানি নীচে! ভারতের যা-কিছু ভালো, যা-কিছু মন্দ এবং যা-কিছু বিশেষত্ব, কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধের মধ্যেই করেছিল আত্মপ্রকাশ। নরের সঙ্গে নারায়ণের মিতালি, শ্রীকৃষ্ণের মুখে গীতার বাণী, ভীমার্জুনের অতুলনীয় বীরত্ব, ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের মানবতা, কুরু-পাণ্ডবের ভ্রাতৃবিরোধ, অন্যায় যুদ্ধে ভীষ্মের, দ্রোণের ও অভিমন্যুর পতন প্রভৃতির শত শত কাহিনী যুগ-যুগান্তরকে অতিক্রম ক’রে আজও ভারতের জীবন-স্মৃতির ভিতরে দুলিয়ে দিচ্ছে বিচিত্র ভাবের হিন্দোলা! মানুষ যে কখনো দেবতা হয় এবং কখনো হয় দানব, কুরুক্ষেত্রেই আমাদের তা দেখিয়ে দিয়েছে। বহুকাল আগে আমি একবার দাঁড়িয়েছিলুম গিয়ে কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে। কিন্তু সেখানে গিয়েই মনে হ’ল, এ তো প্রান্তর নয়,—এ-যে রক্তে রাঙা সমুদ্র! কুরুক্ষেত্রের প্রত্যেক ধূলিকণাকে ভারতের মহাবীররা স্মরণাতীত কাল আগে যে রক্তের ছাপে আরক্ত ক’রে গিয়েছিলেন,

৮২