পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আনন্দেরঅশ্রুজল

বিংশ-শতাব্দীর সভ্যতাও তা বিলুপ্ত করতে পারে নি। আর আমরা যে-যুগের কথা বলছি সে-যুগে কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে কুরু ও পাণ্ডব পক্ষের যুদ্ধে-মৃত লক্ষ লক্ষ বীরের কঙ্কাল ধূলায় ধূলা হবারও সময় পায় নি! সে বিপুল প্রান্তরে রাত্রে তখন কোনো পথিকই চলতে ভরসা করত না।......এ-যুগেও সেখানে গিয়ে আমি প্রাণের কানে শুনেছি, শত পুত্রের শোকে দেবী গান্ধারীর কাতর আর্তনাদ, অভিমন্যুর শোকে বিধবা উত্তরার কান্না এবং শর-শয্যায় শায়িত ভীষ্মের দীর্ঘশ্বাস!

 কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরের তিন দিকে ছুটছে তিন দল অশ্বারোহী। খানিক অগ্রসর হয়েই তারা দেখতে পেলে, দূরে মৃদু-কদমে ঘোড়া চালিয়ে যাচ্ছে একজন সওয়ার।

 সে আমাদের বন্ধু—ভারতের বন্ধু সুবন্ধু। কেউ যে তার পিছনে আসছে এটা সে অনুমান করতে পারে নি, তাই তার ঘোড়া অগ্রসর হচ্ছে ধীরে ধীরে। সন্দেহ করবার কোন হেতু ছিল না কারণ উত্তর-পশ্চিম ভারত আজ যবন গ্রীক দিগ্বিজয়ীর কবলগত, মহারাজা হস্তীর পতন হয়েছে এবং আলেকজাণ্ডারের প্রধান শত্রু মহারাজা পুরু আজ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শক্তিহীন। ভারতের তরবারি কোষবদ্ধ!

 আচম্বিতে পিছনে বহু অশ্বের পদশব্দ শুনে সুবন্ধু ঘোড়া থামিয়ে ফিরে দেখলে। কিন্তু তখনো সে আন্দাজ করতে পারলে না যে, ওরা অসছে তাকেই ধরবার জন্যে! ভাবলে, এই ভারতীয় সওয়ারের দল যাচ্ছে অন্য কোন কাজে।

 খানিক পরেই সওয়ারের দল যখন খুব কাছে এসে পড়ল তখন সে বিস্মিত নেত্রে দেখলে, সকলকার আগে আগে আসছে ভারতের কুপুত্র, আলেকজাণ্ডারের অন্যতম সেনাপতি ও পথ-প্রদর্শক শশীগুপ্ত।

৮৩