পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 সুবন্ধুর মনে কেমন সন্দেহ হ’ল। সে তাড়াতাড়ি নিজের অশ্বের গ্রীবায় করাঘাত ক’রে বললে, “চল্ রে রাজার ঘোড়া, বিশ্বাসঘাতকের ছায়া পিছনে ফেলে হাওয়ার আগে উড়ে চল্!”

 তার ঘোড়ার গতি বাড়তেই পিছন থেকে শশীগুপ্ত চেঁচিয়ে বললে, “ঘোড়া থামা ও সুবন্ধু! আর পালাবার চেষ্টা ক’রে লাভ নেই! ডানদিকে চেয়ে দেখো, বাঁ-দিকে চেয়ে দেখো! তোমাকে আমরা প্রায় ঘিরে ফেলেছি!”

 সত্য কথা! হতাশ হয়ে সুবন্ধু একটা বড় গাছের তলায় গিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে পড়ল।

 শশীগুপ্তও ঘোড়া থেকে নেমে প’ড়ে বললে, “বসুমিত্র, সুবন্ধুকে বন্দী করো!”

 সুবন্ধু বললে, “যুদ্ধের পালা শেষ হয়েছে, আলেকজাণ্ডার দেশের পথে ফিরে গেছেন! সেনাপতি, এখন আমাকে বন্দী ক’রে আপনাদের কি লাভ হবে?”

 মৃদু হাস্য ক’রে শশীগুপ্ত বললে, “কি লাভ হবে? তুমি কি জানো না, সম্রাট আলেকজাণ্ডারের অনুগ্রহে আমি এক বিস্তীর্ণ প্রদেশের শাসনকর্তার পদ পেয়েছি? ভারতে গ্রীক সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কোথায় কে কোন্ চক্রান্ত করছে, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা হচ্ছে আমার আর এক কর্তব্য।”

 সুবন্ধু বললে, “সেনাপতি শশীগুপ্তের কাছে যে যবনের অন্ন-জল অত্যন্ত পবিত্র, এ-সত্য আমার অজানা নেই। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি?”

 শশীগুপ্ত ক্রুদ্ধ স্বরে বললে, “কার অন্ন-জল পবিত্র, সে কথা আমি এক নগণ্য সৈনিকের মুখে শুনতে ইচ্ছা করি না।”

 সুবন্ধু হাসতে হাসতে বললে, “আমি যে নগণ্য সৈনিক মাত্র, সেসত্যও আমার অজানা নেই। কিন্তু নগণ্য সৈনিককে বন্দী করবার

৮৪