পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একবার এ্যাটেম্পট্ করেচ, পরশু আর একবার করেচ, কিন্তু এর পরে ইফ উই মিট—ইউ নো?

 সুমিত্রা উদ্বেগচকিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, এসব কথার মানে। এ্যাটেম্পট করার অর্থ?

 ডাক্তার এ প্রশ্ন কানেও তুলিলেন না, কহিলেন, কৃষ্ণ আইয়ার, আই অ্যাম সরি!

 আইয়ার মুখ অবনত করিল, কিন্তু উত্তর দিল না। ডাক্তার পকেট হইতে ঘড়ি বাহির করিয়া দেখিলেন, ভারতীর হাত ধরিয়া একটুখানি আকর্ষণ করিয়া বলিলেন, এইবার চল তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি যাই। ওঠ।

 ভারতী স্বপ্নাবিষ্টের ন্যায় বসিয়াছিল, ইঙ্গিতমাত্র নিঃশব্দে উঠিয়া দাঁড়াইল। তাহাকে সম্মুখে রাখিয়া তিনি ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন, শুধু দ্বারের কাছ হইতে একবার সকলকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেন, গুড নাইট!

 এই বিদায় বাণীর কেহ প্রত্যুত্তর দিল না, অভিভূতের ন্যায় সকলে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। ভারতী নীচে নামিয়া গেলে, ডাক্তার উপরের দিকে চোখ রাখিয়া যখন ধীরে ধীরে নামিতেছিলেন, অকস্মাৎ কপাট খুলিয়া শশী মুখ বাহির করিয়া বলিল, কিন্তু আমার যে আপনাকে ভয়ানক প্রয়োজন ডাক্তার। এই বলিয়া সে দ্রুতপদে নামিয়া তাঁহার পাশে আসিয়া দাঁড়াইল, রুদ্ধশ্বাসে কহিল, আমি ত মানুষের মধ্যেই নই ডাক্তারবাবু, কোনদিন আপনার কোন কাজে লাগবার শক্তিই আমার নেই, কিন্তু আপনার ঋণ আমি চিরদিন মনে করে রাখবো। এ আমি ভুলব না।

 ডাক্তার সস্নেহে তাহার হাতখানি টানিয়া লইয়া বলিলেন, কে বলে তোমাকে মানুষ নয়, শশী? তুমি কবি, তুমি গুণী, তুমি সকল মানুষের বড়। আর আমার কাছে তোমার ঋণ যদি কিছু সত্যিই থাকে, সে তো না ভোলাই ভাল।

 শশী বলিল, না, আমি ভুলব না! কিন্তু, যেখানেই থাকুন, যা কিছু আমার আছে সমস্তই আপনার—এ কথা কিন্তু আপনিও ভুলতে পাবেন না।

 উভয়ে ভারতীর কাছে আসিয়া পৌঁছিতে সে উৎলুক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি দাদা?

 ডাক্তার সহাস্যে বলিলেন, অসময়ে ওর ত কোন বিপদই ছিল না, কিন্তু হঠাৎ সময়টা ভাল হয়ে পড়াতেই এর মহা চিন্তা হয়েচে, পাছে কৃতজ্ঞতার ঋণ আর মনে না থাকে। তাই ছুটে বলতে এসেছে, ওর যা কিছু সমস্ত আমার।

 ভারতী বলিল, তাই নাকি শশীবাবু?

২২৩