পাতা:পরাধীন প্রেম - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গলির মধ্যে খোলার বাড়িতে কাতিকের বাসা । সে পর্যন্ত অবশ্য গাড়ীটা যেতে পারে না। তবে গলিটার মাখ পর্যন্ত যে সময়ের মধ্যে তারা পৌঁছে যায়, সাহেবের গাড়ীটা দিয়ে ছাড়া অন্য কোন উপায়েই যে তা সম্ভব হত না, তাতে সন্দেহ নেই। গলির মধ্যে খানিক এগোলেই কাতিকের খোলার বাড়ি । বাড়ির সামনে গিয়ে একটা আশ্চর্য হতে হয়। বাড়িতে কোন গোলমাল নেই বরং বেশ যেন চুপচাপ । বাইরের দরজা পযন্ত ভিতর থেকে বন্ধ করা । হাসপাতালে নিয়ে গেছে ? কিন্ত একটা বাড়ি থেকে একটি বিষ-খাওয়া বেীকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরেও এত তাড়াতাড়ি তো বাড়িটার এমন নিঝম হয়ে যাবার কথা নয় ! কড়া নাড়তে একজন গেঞ্জি পরা বড়ো মানষে দরজা খোলে। কাতিক ব্যাকলভাবে জিজ্ঞাসা করে ঃ কি হয়েছে দীনেশ বাবা ? দীনেশ শাস্তভাবেই নীচু গলায় বলে, ভেতরে আয় না। বাবা, সব শনবি । ইনি কে ? অনিলের পরিচয় শনে দরজা বন্ধ করতে করতে দীনেশ বলে, একটা গোপান রাখবেন। ব্যাপারটা। গরীবকে ফ্যাসাদে ফেলবেন না । ডাক্তার এসেছে, বৌটাকে বাঁচানো যাবে । শনে কাতিক যেন দেহে প্ৰাণ ফিরে পায়, অনিলও পরম সাবস্তি বোধ করে । বাড়িতে কাতি কেরা ছাড়াও আরও দটি পরিবার থাকে । বাইরে থেকে বঝতে না পারলেও উঠানে পা দেওয়া মাত্র অনিল বাড়ির ভিতরের মানষগলির চাপা উত্তেজনা টেক্স পায়। কতগলি চাপা গলার গঞ্জন চলছিল, তাদের দেখে হঠাৎ সেটা থেমে যায়। পাঁচীকে শোয়ান হয়েছে ঘরের সামনে রোয়াকে, দীনেশের চেনা ডান্তারের নির্দেশে চলেছে বিষের ক্লিয়ায় তার মরণ ঠেকাবার প্রক্রিয়া। মাথার কাছে যে রোগা কালো কিধবাটি বসেছিল, দেখে সহজেই অনমান করে নেওয়া যায় সে কাতিকের মা । কথা বলার রকম থেকেও টের পাওয়া যায় । ঃ তোর বঙ্গজাত বৌটাকে নিয়ে আর তো পারি। নে কাতিক ! হাড় মাস কালি করে দিলে । সোয়ামী শাউড়ী করলে বিষ খেয়ে শোধ নোবে দীনেশ কড়া সরে ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দেয়ে বলে, থাক না এখন- ওসব কথা পরে হবে । কাতিকের মা চুপ হয়ে গিয়ে শােধ অচিলে চোখ মোছে। দীনেশ একটা সিগ্রেট ধরায় । অনিলকে সে বলে, ঝোঁফের মাথায় বিষ খেয়েছিল, তারপর বিষের কাজ শহর হতেই মারার ভয়ে হাউমাউ করতে লাগল। আমায় গিয়ে খবর দিতে ডাক্টারবাবকে নিয়ে এলাম, তারপর ফোন করলাম কাতিকের অফিসে ! বিপদে আপদে মানষের মাথা কেমন বেঠিক হয়ে যায় দেখান, ফোন করার পর খেয়াল হল বিষ খাওয়ার কথাটা ফাঁস করে দিয়েছিা! বললেই হত বাড়িতে বিপদ অনিল বলে, না না, ফলে বেশ করেছেন । বিষের কথা শানেই একেবারে অফিসের গাড়ীতে তলে ওকে নিয়ে এসেছি। 8