পাতা:পাখীর কথা - সত্যচরণ লাহা.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় ভাগ
৯৭

মতদ্বৈধ নাই। সর্ব্বত্রই কৃষিজীবিগণের ভূয়োদর্শন বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞের অনেক সাহায্য করিতেছে। তাহার ফলে Economic Ornithology নামে একটা নূতন শাস্ত্র গড়িয়া উঠিয়াছে। সর্ব্বত্র প্রকৃতির সহিত দ্বন্দ্ব করিয়া মানুষকে জীবিকা অর্জ্জন করিতে হয়। যুগযুগান্তর ধরিয়া এই দ্বন্দ্ব চলিয়া আসিতেছে; প্রকৃতির অন্তর্গূঢ় অন্ধ-শক্তির নিকটে পরাভব স্বীকার করিতে সে কখনই রাজী হয় নাই। প্রতিদ্বন্দ্বী কখনও কীট, কখনও পতঙ্গ, কখনও সরীসৃপ আকারে দেখা দেয়; মানুষ অযাচিতভাবে পাখীর সাহায্য পাইয়া তাহাদিগের উপর জয়ী হয়। সর্প ও মূষিক পরস্পর জাতশত্রু, আবার উভয়েই কৃষিজীবী মানুষের পরম শত্রু; উহাদিগকেও নষ্ট করিতে পাখীর সাহায্য আবশ্যক হয়। অনেক সময়ে বনজ উদ্ভিদ চাষের বিষম অন্তরায় হইবার উপক্রম করে; চেষ্টা করিয়াও সেগুলির সম্পূর্ণ উচ্ছেদসাধন করা অনেক সময়ে সম্ভবপর হয় না; সহসা কয়েকটি পাখী আসিয়া সে কার্য্য সুসম্পন্ন করিয়া দেয়। কৃষকের পালিত পশুকে কীটাদির আক্রমণ জনিত অনিষ্ট হইতে পাখী যে কতটা রক্ষা করে, তাহা বোধ হয় অনেকে অবগত নহেন। পুষ্পের পরাগ লইয়া পুষ্পান্তরে সঞ্চারিত করিয়া, ফলের বীজ দেশ হইতে দেশান্তরে ছড়াইয়া দিয়া, অনুর্ব্বরা ভূমিকে উর্ব্বরা করিয়া, পাখীরা আমাদের অজ্ঞাতসারে মানবসমাজের কত উপকার করে, তাহা চিন্তা করিলে বিস্মিত হইতে হয়।

 অতএব দেখা যাইতেছে যে, পক্ষিবিজ্ঞানের এমন একটা দিক্ আছে, যেখানে পাখী মানুষের কেবলমাত্র নয়নরঞ্জনের বা চিত্তবিনোদনের সামগ্রী নহে; আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সে অনেক সময়ে আমাদের উপকারী বন্ধুর কাজ করে। যদি তাহার সেই উপকারের কথা স্মরণ করিয়া আমরা তাহার যথাযোগ্য পরিচর্য্যার ব্যবস্থা করিতে না পারি, তাহা হইলে আমাদিগকে বিষম ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইবে।