পাতা:পাঠমালা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শকুন্তলা।

অতি পূর্ব্বকালে ভারতবর্ষে দুষ্মন্ত নামে নরপতি ছিলেন। তিনি একদা মৃগয়া উপলক্ষে কণ্ব মুনির আশ্রমে উপনীত হন। মহর্ষি তৎকালে আশ্রমে উপস্থিত ছিলেন না স্বীয় পালিত তনয়া শকুন্তলার দুর্দ্দৈবশান্তির নিমিত্ত সোমতীর্থ প্রস্থান করিয়াছিলেন। সেই আশ্রমে কিছু দিন অবস্থিত করিতে করিতে শকুন্তলার সহিত রাজার অতি প্রগাঢ় প্রণয় সঞ্চার হইল। তখন তিমি মহর্ষির প্রত্যাগমন প্রতীক্ষা না করিয়া তদীয় অগোচরে ধৰ্মসাক্ষী করিয়া গান্ধর্ব্ব বিধানে শকুন্তলার পাণিগ্রহ সমাধান করিলেন। অনসূয়া ও প্রিয়ংবদা নামে শকুন্তলার দুই সহচরী ছিলেন কেবল তাঁহারাই রাজা ও শকুন্তলার প্রণয় ও পাণিগ্রহণ বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত অবগত ছিলেন তদ্ধ্যতিরিক্ত আশ্রমবাসী অপর কোন ব্যক্তিই এ বিষয়ের বিন্দুবিসর্গও জানিত না। রাজা শকুন্তলাসহবাসে কিছুদিন আশ্রমে অবস্থিতি করিয়া রাজধানী প্রতিগমন কালে শকুন্তলার হস্তে স্বনামাঙ্কিত মণিময় অঙ্গুরীয় অৰ্পণ করিলেন এবং কহিলেন প্রিয়ে এই অঙ্গুরীয় ভোমার নিকট রহিল, প্রতি দিন আমার এক এক নামাক্ষর গণনা করিবে গণনাও সমাপ্ত হইবে, আমার লোক আসিয়া তোমারে রাজধানী লইয়া যাইবেক, ইহার কোন ব্যতিক্রম হইবেক না। রাজা রাজধানীতে গিয়া পাছে ভুলিয়া যান্ এই আশঙ্কায় ও বিরহভাবনায় শোকাকুলা শকুন্তলার নয়নযুগল কইতে আতি প্রবলবেগে অশ্রুধারা বিগলিত হইতে লাগিল। রাজা অশেষবিধ আশ্বাসবাক্যে তাঁহাকে সান্ত্বানা করিয়া তাঁহার ও তাঁহার সহচরীদিগের নিকট বিদায় লইয়া নিজ রাজধানী প্রস্থান করিলেন।