কথাই আমার বিয়ে ঘটিতেছে। এই সকল কথা শুনিয়া আমার আশাই বা না জন্মিবে কেন? অথবা, আমি মৃগতৃষ্ণিকায় ভ্রান্ত হইয়াছি, নামসদৃশ্য শ্রবণে মনে মনে বৃথা এত আন্দোলন করিতেছি। এরূপ নামমাদৃশ্য শত শত ঘটিতে পারে।
শকুন্তলা অনেক ক্ষণ অবধি পুত্রকে দেখেন নাই এই নিমিত্ত অতিশয় উৎকণ্ঠিত হইয়া, অন্বেষণ করিতে করিতে সহসা সেই স্থানে উপস্থিত হইলেন। রাজা, বিরহকৃশা মনিবেশ শকুন্তলাকে সহসা সেই স্থানে উপস্থিত দেখিয়া, বিস্ময়াপন্ন হইয়া এক দৃষ্টিতে তার দিকে চাহিয়া রহিলেন; নয়নযুগলে জলধারা বহিতে লাগিল; বাক্শক্তিরহিত হইয়া দণ্ডায়মান রহিলেন; একটিও কথা কহিতে পারিলেন না। শকুন্তলাও অকস্মাৎ রাজাকে দেখিয়া স্বপ্নদর্শনবৎ বোধ করিয়া, স্থির নয়নে তাঁহার দিকে চাহিয়া রহিলেন; নয়নযুগল বাষ্পবারিতে পরিপূর্ণ হইয়া আসিল। বালক, শকুন্তলাকে দেখিবামাত্র, মা মা করিয়া তাহার নিকটে উপস্থিত হইল এবং জিজ্ঞাসিল মা! ও কে, ওকে দেখে তুই দিচ্ছ কেন? তখন শকুন্তলা গদ বচনে কহিসেন বাছা! ও কথা আমাকে জিজ্ঞাসা কর ফেন? আপন অদৃষ্টকে জিজ্ঞাসা কর।
কিয়ৎক্ষণ পরে রাজা মনের আবেগ সংবরণ করিয়া শকুন্তলাকে কহিলেন প্রিয়ে! আমি তোমার প্রতি যে অসদ্ব্যবহার করিয়াছি তাহা বলিবার নয়। তৎকালে আমার মতিচ্ছন্ন ঘটিয়াছিল, তাহাতেই অবমাননা করিয়া বিদায় করিয়াছিলাম। কয়েক দিবস পরেই আমার সকল বৃত্তান্ত স্মরণ হইয়াছিল; তদবধি আমি কি অসুখে কাল যাপন করিয়াছি তাহা আমার অস্তরাত্মাই জানেন। আমি পুনর্ব্বার তোমার দর্শন পাইব আমার সে আশা ছিল না। এক্ষণে তুমি প্রত্যাখ্যানদুঃখ পরিত্যাগ করিয়া আমার অপরাধ মার্জ্জনা কর।