পাতা:পাষাণের কথা.djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাষাণের কথা

রাখিয়া মিহিরকুল অবশিষ্ট সৈন্য লইয়া লুণ্ঠনে ব্যাপৃত হইতেন ও বর্ষাসমাগমে পুনরায় পরিখাপার্শ্বে উপস্থিত হইতেন। এইরূপে বারাণসী হইতে কান্যকুব্জ পর্য্যন্ত গঙ্গার উত্তর তীরস্থিত ভূখণ্ড জনমানব শূন্য হইল। ক্রমে প্রতিষ্ঠান দুর্গে আহার্য্যের অভাব অনুভূত হইল। সম্রাট বুঝিলেন, আর অধিকদিন দুর্গরক্ষা সম্ভব হইবে না।

 সেই সময় হইতে সম্রাট প্রতিদিন যথাসাধ্য নাগরিকগণকে নগর হইতে দূরে প্রেরণ করিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন। তিনি সুস্থ, সবলকায়, অস্ত্রধারণক্ষম ব্যক্তিগণকে দুর্গমধ্যে আনয়ন করিতে লাগিলেন। ক্রমশঃ নগর জনশূন্য হইল ও গ্রীষ্মের প্রারম্ভে দুর্গবাসিগণ কর্ত্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া শত্রুসৈন্যের অধিকারে আসিল। লোকে বলিত, প্রতিষ্ঠান অবরোধের শেষবর্ষের ন্যায় গ্রীষ্মাধিক্য বহুকালযাবত আর্য্যাবর্ত্তে অনুভূত হয় নাই। বহু কষ্টে, বহু অর্থব্যয়ে বুভুক্ষিত পাষাণরাশির মধ্যে রচিত প্রতিষ্ঠানদুর্গের কূপগুলিতে অধিক জল থাকিত না ও গ্রীষ্মকাল অতীত হইবার পূর্ব্বেই সেগুলি প্রায় শুষ্ক হইয়া যাইত। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত বহু অর্থব্যয়ে গঙ্গাজল আনয়ন করিবার জন্য যে পয়ঃপ্রণালী খনন করিয়াছিলেন, প্রতিষ্ঠানযুদ্ধের প্রারম্ভে তাহা হূণগণ কর্ত্তৃক রুদ্ধ হইয়াছিল। পূর্ব্বে গ্রীষ্মকালে দুর্গমধ্যে নদীর জলই ব্যবহৃত হইত, কিন্তু অবরোধের প্রারম্ভে পয়ঃপ্রণালী বদ্ধ হওয়ায় উষ্ট্রবাহনে যমুনা-সঙ্গম হইতে জল আসিত ও যথাসম্ভব কূপোদক ব্যবহৃত হইত। নগর হূণসৈন্য কর্ত্তৃক অধিকৃত হইলে জল আনয়নের পথ রুদ্ধ হইল। তখন কূপোদকই অবরুদ্ধ সৈনিকমণ্ডলীর একমাত্র ভরসাস্থল হইল। নগর পরিত্যাগকালে সম্রাট অনুমান করিয়াছিলেন যে, দুর্গ নগর অপেক্ষাও সামান্য লোকবলে রক্ষিত হইতে পারে; সুতরাং, নগর পরিত্যাগ করিয়া দুর্গরক্ষার চেষ্টা করিলে আহার্য্যদ্রব্য অল্প-

১১৮