পাষাণের কথা
দিগকে অরণ্যের অত্যাচার হইতে রক্ষা করিত, বংশদণ্ড ও কাষ্ঠখণ্ডের সাহায্যে জীর্ণ সঙ্ঘারামের সংস্কার করিত এবং সময়ে সময়ে সঙ্ঘারামের প্রাঙ্গণে বৃক্ষচ্ছায়ায় বসিয়া গ্রামবৃদ্ধগণের নিকটে বোধিসত্ত্বগণের অসীম প্রভাব এবং যাদুবিদ্যায় তাহাদিগের অসাধারণ পারদর্শিতা সম্বন্ধে অত্যদ্ভুত কাহিনী শ্রবণ করিয়া ভয়ে সঙ্কুচিত হইত। কথন কখন দুই একজন কাষায়পরিহিত ভিক্ষু দূরদেশ হইতে তীর্থভ্রমণে আসিতেন, বহু পরিশ্রমে বনপথ অতিক্রম করিয়া আমাদিগের ধ্বংসাবশেষ দেখিয়া অশ্রুবিসর্জ্জন করিতেন। আভীর রমণীগণ যথাসাধ্য তাঁহাদিগের পরিচর্য্যা করিত। তাঁহারা গৌতম বুদ্ধ কর্ত্তৃক প্রচলিত প্রাচীন প্রথানুসারে স্তূপ অর্চ্চন, পরিক্রমণ ইত্যাদি ক্রিয়া সমাপন করিয়া পুনরায় বনমধ্যে প্রবিষ্ট হইতেন। এইরূপে কত দিন কাটিয়াছিল তাহা যদি নির্দ্দেশ করিতে পারিতাম তাহা হইলে আর্য্যাবর্ত্তের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থাকিত না। দীর্ঘ দিবস, মাস, বর্ষ আমরা বনচারী আভীরগণের উপাস্য দেবতা হইয়াছিলাম, সঙ্ঘারাম ক্রমে মৃৎস্তূপে পরিণত হইল, পরিক্রমণের পথ শ্যামল দুর্ব্বাদলে আচ্ছন্ন হইল, হরিদ্বর্ণ শৈবালে আমার লোহিত দেহ আবৃত হইয়া গেল, আর্য্যাবর্ত্ত হইতে কেহ আর আমাদিগকে সন্ধান করিতে আসিল না।
এক দিন আভীর পল্লীতে নূতন সম্প্রদায়ভুক্ত জনৈক ভিক্ষু আসিয়াছিল। তাহার পরিচ্ছদ গৈরিকবর্ণরঞ্জিত, কেশপাশ দীর্ঘ জটায় পরিণত, সমগ্র দেহ ভস্মলিপ্ত এবং তাহার হস্তে ত্রিশূল। পল্লীর বালকবালিকাগণ তাহাকে দেখিলে দূরে পলায়ন করিত; কিন্তু আভীর বৃদ্ধগণ তাহাকে অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা করিত। এই নূতন ভিক্ষু মাসাধিককাল আভীর গ্রামে বাস করিয়াছিল। সে প্রতিদিন বনমধ্যে প্রবেশ করিয়া বহুদূর পর্য্যটন করিত। সে বনভ্রমণকালে একে একে প্রাচীন আটবিকদেশের
১৪৮