পাতা:পুতুলনাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানে না বুঝিয়া তাহার একটু শিহরণ জাগিত মাত্র। হারু ওইখানে পড়িয়া থাকিত । কতদিন পরে শিয়ালের দাতা ও শকুনির চঞ্চুতে সাফা-করা তাহার হাড় কয়খানি মানুষ আবিষ্কার কারিত কে জানে ! পাঞ্চুকে চণ্ডীর-মা যেমন আবিষ্কার কারিয়াছিল । সর্বাঙ্গে খাবলা খাবালা পচা মাংস, কোথাও হাড় বাহির হইয়া পড়িয়াছে। দুই হাতের মুঠার মধ্যে প্ৰকাণ্ড খরিস স্বাপট শুকাইয়া হইয়া আছে একেবারে দড়ি । স্রোতের বেগে নৌকা মৃদু মৃদু দুলিতেছিল। নৌকার গলুইএ সে দোলন একটা জীবন্ত প্ৰাণীর অস্থিরতার মতো পৌছিতেছে। নড়িয়া চড়িয়া শশী এক 'সময় সোজা হইয়া বসে । মনে একটা বিড়ি ধরাইবার ইচ্ছা জাগিতেছিল । কিন্তু সেটুকু উৎসাহও সে যেন পায় না । তাহার চোখের সামনে চারিদিক ফ্রিমে গাঢ় অন্ধকারে ঢাকিয়া যায় । অতীরের গাছগুলি জমাটবাধা অন্ধকারের ক্ষপ নেয়, জলের উপর জনহীন নৌকা কখানা হালকা ছায়ার মতো আলগোছে ভাসিতে থাকে। মাথার উপর দিয়া অদৃশ্যপ্ৰায় কতগুলি পাখি সঁ সঁ শব্দ করিয়া উড়িয়া যায় । চারিদিকে জোনাকি বিকামিক করিতে আরম্ভ

  • **

এণ্ড কাছেও হারুর মুখ ঝাপসা হইয়া যায় । তাহার মুখখানা ভাল কবিয়া দেখিবার চেষ্টায় ব্যৰ্থ হইয়া সে যে মরিয়া গিয়াছে এই সত্যটা শশী যেন আবার নূতন করিয়া অনুভব করে। ভাবে, মৈরিবার সময় হারু কি ভাবিতেছিল কে জানে! কোন কল্পনা কোন অনুভুতির মাঝখানে তাহার হঠাৎ ছেদ পড়িয়াছিল ? ) মেয়ের জন্য পাত্ৰ দেখিতে হারু বাজিতপুরে গিয়াছিল এটা শশী জানিত । পথ সংক্ষেপ করিবার জন্য ওই বিপথে সে পাড়ি জমাইয়াছিল। পথ তাহার ংক্ষিপ্তই হইয়া গেল। পাড়িও জমিল ভালই। ঘণ্টা দুই পরে গোটা তিনেক লণ্ঠন সঙ্গে করিয়া হারুর সাত-আট জন স্বজাতি আসিয়া পড়িল ৷ . নিস্তব্ধ ঘাটটি মুহুর্তে হইয়া উঠিল মুখরিত । শশী সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করিল, নিতাই এসেছে, নিতাই ? লিতাই সাড়া দিল আজে, এই যে আমি ছোটবাবু! নিতাইয়ের দায়িত্বজ্ঞান প্ৰসিদ্ধ। শশী অনেকটা ভরসা পাইল । হারুর বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে নিতাই ? হয়েছে ছোটবাবু। আলো উচু করিয়া ধরিয়া সকলে তাহারা ভিড় করিয়া হারুকে দেখিতে ܓ